দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারত সাড়া দিচ্ছে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি : সংগৃহীত
কয়েক দফা আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ-সংক্রান্ত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পণ্য আমদানিতে ভারতের বিভিন্ন অশুল্ক বাধা প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার উদ্দেশে আমরা ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাইনি। বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করছি, তবে সমাধানে ভারতের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
আরো পড়ুন : খাদ্য মজুদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ: খাদ্য উপদেষ্টা
উপদেষ্টা জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি। যদিও ব্যবসায়ীরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম বলে তার ধারণা।
এর আগের দিন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ের (ডিজিএফটি) এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ। এসব পণ্য শুধু মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।
স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উপদেষ্টা অবশ্য বলেন, পাটপণ্যে এই বিধিনিষেধ রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না।
সম্প্রতি ভারত একাধিক অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল, কোমল পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে সীমাবদ্ধতা দেয়। তার আগে ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে। পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশও ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে।
গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি স্থলপথে ভারতে যায়। এ নিষেধাজ্ঞা শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং রপ্তানিকারকদের জন্য লজিস্টিক জটিলতা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই অশুল্ক বাধার পথে হাঁটছে এবং ঘনিষ্ঠ অংশীদার হয়েও সংলাপের বদলে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটা শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাকেও হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বচ্ছ ও ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হওয়া জরুরি, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে মুক্ত থাকবে।