ভারত কেন শিরোপা নেয়নি? মোদী, নকভী, সুরিয়া ও সালমান যা বললেন

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ভারত। তবে ম্যাচ শেষে নানা নাটকীয়তায় শিরোপা জয়ের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দি দেশের মাঠের বাইরের লড়াই। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে পাকিস্তানকে হারিয়ে নবমবারের মতো এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ভারতীয় ক্রিকেট দল।
এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ২০২৫ আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে সুরিয়া কুমার ইয়াদাভের দল। তবে চ্যাম্পিয়ন হলেও শিরোপা হাতে নেয়নি ভারত। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি মোহসিন নকভীর হাত থেকে শিরোপা নিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় দল।
নকভী একইসঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া জানান, খেলোয়াড়রা আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এদিকে, ভারতীয় ক্রকেটারেরা নকভীর হাত থেকে শিরোপা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাদেরকে টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি কিংবা বিজয়ী দলের মেডেল কিছুই হস্তান্তর করেনি এসিসি। তবে এসব এখন আলোচনার টেবিলে নেই। কথা হচ্ছে ম্যাচের পর পোস্ট ম্যাচ আনুষ্ঠানিকতায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের নাটকীয় সব সিদ্ধান্ত নিয়ে।
ম্যাচের পর যা যা ঘটলো
জয়ের পরপরই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। সম্প্রচারের সময় নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার সাইমন ডুল জানান, ভারতীয় দল পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অংশ নেবে না এবং ট্রফিও নেবে না। এরপর বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া নিশ্চিত করেন, ভারতীয় ক্রিকেটাররা এসিসি সভাপতি নকভীর কাছ থেকে ট্রফি না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে বিজয়ী দল মঞ্চে ওঠেনি এবং ট্রফিও ভারতীয় দলের অধিনায়ককে দেয়া হয়নি।
যদিও ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিলক ভার্মা, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট অভিষেক শর্মা এবং এমভিপি কুলদীপ যাদব ব্যক্তিগত পুরস্কার নিতে মঞ্চে যান। তবে তারা নকভীর দিকে কোনো মনোযোগ দেননি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর খবরে বলা হয়েছে, মঞ্চে উপস্থিত একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভারতীয় খেলোয়াড়দের জন্য হাততালি দেননি, তিনি ছিলেন নকভী।
অন্যদিকে বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এসিসি ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ ঠিক করছিলেন, কার হাত দিয়ে ট্রফি প্রদান করা হবে। পরে অনুষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ করে ট্রফি ড্রেসিংরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারত ট্রফি না গ্রহণ করলেও মাঠে নিজেদের মতো করেই জয় উদ্যাপন করেছে। ফাইনালের একদিন আগে নকভী এক বিবৃতিতে বলেন, আমি দারুণ এক ফাইনাল দেখতে মুখিয়ে আছি এবং বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
মোদীর বক্তব্য, নকভীর জবাব
ভারতের জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দলকে অভিনন্দন জানান। তার পোস্টে তিনি 'অপারেশন সিন্দুর'-এর উল্লেখ করেন। মোদী লেখেন, খেলার মাঠে অপারেশন সিন্দুর। ফলাফল একই, ভারতের জয়। আমাদের ক্রিকেটারদের অভিনন্দন।
চলতি বছরের এপ্রিলে পাহেলগামে হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযানকে 'অপারেশন সিন্দুর' নাম দেয়া হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের জবাব দেন এসিসি সভাপতি মোহসিন নকভী। মোদীর পোস্ট রিপোস্ট করে তিনি লেখেন, যদি যুদ্ধই আপনার গর্বের মাপকাঠি হয়, তাহলে ইতিহাস ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের কাছে ভারতের অপমানজনক পরাজয়ের রেকর্ড রেখেছে। আর কোনো ক্রিকেট ম্যাচই সেই সত্য পরিবর্তন করতে পারবে না। খেলায় যুদ্ধকে টেনে আনা হতাশাজনক এবং খেলাধুলার চেতনার প্রতি অপমান।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইনস্টাগ্রামে লেখেন, অসাধারণ জয়। আমাদের খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত উদ্যম আবারও প্রতিপক্ষকে ভেঙে দিয়েছে। ক্ষেত্র যাই হোক না কেন, ভারতের জয় নিশ্চিত।
ভারতীয় অধিনায়ক যা বলেন
ভারতের অধিনায়ক সুরিয়া কুমার ইয়াদাভ ট্রফি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এটি দলের যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল। এদিকে, বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া সংবাদ সংস্থা এএনআইকে স্পষ্ট করে জানান, ভারতীয় দল পাকিস্তানের মন্ত্রী ও এসিসি সভাপতি নকভীর কাছ থেকে ট্রফি না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আইসিসি সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে।
এদিকে, ভারতীয় ক্রকেটারেরা নকভীর হাত থেকে শিরোপা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাদেরকে টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি কিংবা বিজয়ী দলের মেডেল হস্তান্তর করেনি এসিসি। সুরিয়া কুমার ইয়াদাভ জানান, তিনি কখনও দেখেননি যে কোনো চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেয়া হয়নি। যে ট্রফি কঠোর পরিশ্রমে জেতা হয়েছে, সেটাই দেয়া হলো না। আমার বিশ্বাস আমরা সেটা পাওয়ার যোগ্য ছিলাম।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন নকভীর কাছ থেকে ট্রফি না নেয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ছিল কিনা, জবাবে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, আমরা মাঠেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ আমাদের কিছু বলেনি।
পাক অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচের পর পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলী আগাকে ট্রফি বিতর্ক ও ভারতীয় দল নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তার পারফরম্যান্স কি এই বিতর্কের আড়ালে চাপা পড়ে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের তো সব সময় সমালোচনা করা হয়। আমরা জানি এই টুর্নামেন্টে আমাদের ব্যাটিং প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি এবং কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে তা নিয়েই আমরা ভাবি। অন্য কিছুতে আমাদের মনোযোগ নেই।
হ্যান্ডশেক ও খেলোয়াড়সুলভ আচরণ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সালমান আগা জানান, ভারতীয় ক্রিকেটারদের এমন আচরণ তার কাছে হতাশাজনক লেগেছে। তিনি বলেন, আপনি যদি ক্রিকেটের দিকে তাকান, হাত মেলাতে অস্বীকার করা বা এমন আচরণ করা আমাদের প্রতি অসম্মান নয়, বরং ক্রিকেটের প্রতি অসম্মান। আর যারা ক্রিকেটকে অসম্মান করে, তারা কোথাও না কোথাও প্রকাশ পাবে। আমি মনে করি না কোনো ভালো দল আজকের মতো আচরণ করবে। ভালো দল সেটাই করে যা আমরা করেছি। একাই যাওয়া, ট্রফি নিয়ে ছবি তোলা এবং মেডেল সংগ্রহ করা।
সালমান আগা দাবি করেন, টুর্নামেন্ট শুরুর সময় সংবাদ সম্মেলন বা রেফারির সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় অধিনায়ক তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। তবে মাঠে প্রকাশ্যে তা করেননি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় উনি (সুরিয়া কুমার) কেবল তাকে দেয়া নির্দেশই মেনে চলছিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে ঠিক আছে।