দিল্লি হাইকোর্ট
স্বনির্ভর নারী ভরণপোষণ চাইতে পারবেন না

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম

দিল্লি হাইকোর্ট। ছবি : সংগৃহীত
কোনো নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর হলে ভরণপোষণ বা অ্যালিমনি দেওয়া যাবে না, এমন রায় দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, স্থায়ী ভরণপোষণ বা পার্মানেন্ট অ্যালিমনি সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি উপায়, বিত্তশালী হওয়ার হাতিয়ার নয়।
বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল ও বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্কর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দেন।
ভারতের আইনি সংবাদমাধ্যম বার অ্যান্ড বেঞ্চ–এর বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।
আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দাবি করা ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি আর্থিকভাবে সহায়তার প্রয়োজনীয় অবস্থায় আছেন। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের ২৫ নম্বর ধারা অনুসারে এই বিচারিক ক্ষমতা এমনভাবে প্রয়োগ করা যাবে না যাতে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর আবেদনকারীকে অ্যালিমনি প্রদান করা হয়। আদালতকে অবশ্যই উভয় পক্ষের আয় ও আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দিল্লি হাইকোর্টের এই রায় আসে একটি বিবাহবিচ্ছেদ মামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে স্বামী একজন আইনজীবী এবং স্ত্রী ভারতীয় রেলওয়ে ট্রাফিক সার্ভিসের কর্মকর্তা। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের বিয়ে হয়, তবে মাত্র ১৪ মাস পরই তাঁরা আলাদা হয়ে যান।
স্বামীর অভিযোগ ছিল, স্ত্রী তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, অপমানজনক বার্তা পাঠিয়েছেন এবং পেশাগত ও সামাজিকভাবে অপদস্থ করেছেন। অন্যদিকে স্ত্রী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা নির্যাতনের অভিযোগ আনেন।
ফ্যামিলি কোর্টের রায়ে বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর হয় এবং আদালত উল্লেখ করে যে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদে রাজি হওয়ার শর্ত হিসেবে ৫০ লাখ রুপি আর্থিক সমঝোতা দাবি করেছিলেন। পরে এ বিষয়টি তিনি নিজেই আদালতে স্বীকার করেন।
আরো পড়ুন : ভারতের কফ সিরাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা
দিল্লি হাইকোর্ট ফ্যামিলি কোর্টের রায় বহাল রেখে বলেন, ফ্যামিলি কোর্টের সিদ্ধান্তকে ভিত্তিহীন বলা যায় না। আপিলকারীর মনোভাবে আর্থিক দিক স্পষ্টভাবে বিদ্যমান।
বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, স্ত্রী তাঁর স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে ‘অপমানজনক ভাষা’ ব্যবহার করেছিলেন, এমনকি স্বামীকে ‘অবৈধ সন্তান’ বলেও আখ্যা দেন—যা আদালতের মতে মানসিক নির্যাতনের শামিল।
সবশেষে আদালত স্থায়ী ভরণপোষণের আবেদন নাকচ করে দেয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারী নারী একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, যিনি ভালো বেতন পান এবং আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ স্বনির্ভর।