যে কারণে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আরো নিচে ভারতীয় পাসপোর্ট
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩১ পিএম
ভারতীয় পাসপোর্ট। ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী পাসপোর্ট শক্তিমত্তার সূচকে ভারতের অবস্থান আরো নিচে নেমেছে। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স–এর ২০২৫ সালের তালিকায় দেশটির স্থান এখন ৮৫তম, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ অবনতি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজানের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলোও এবার ভারতকে পেছনে ফেলেছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, বিশ্বের ১৯৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৫তম, যা দেশটির পাসপোর্টের ক্রমাগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হেনলি সূচক অনুযায়ী, একটি দেশের নাগরিকরা কতগুলো দেশে ভিসামুক্তভাবে প্রবেশাধিকার পান, তার ভিত্তিতেই র্যাংক নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা ৫৭টি দেশে ভিসামুক্তভাবে যেতে পারেন। অথচ রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজানের অবস্থান যথাক্রমে ৭৮তম, ৭৪তম ও ৭২তম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাসপোর্টের শক্তি একটি দেশের ‘সফট পাওয়ার’ ও কূটনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন। শক্তিশালী পাসপোর্ট মানে সহজ ভ্রমণ, ব্যবসা ও শিক্ষার সুযোগ; আর দুর্বল পাসপোর্ট মানে বেশি জটিলতা, দীর্ঘ অপেক্ষা ও উচ্চ ব্যয়।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের কারণ জানালেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা
গত এক দশক ধরে ভারতের অবস্থান প্রায় একই জায়গায় মানে ৮০-এর ঘরে আটকে আছে। ২০২১ সালে এটি নেমেছিল ৯০তম স্থানে। তুলনামূলকভাবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো এশীয় দেশগুলো নিয়মিতভাবেই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
২০২৫ সালের সূচকে প্রথম স্থানে সিঙ্গাপুর (১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ), দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০ দেশ) ও তৃতীয় স্থানে জাপান (১৮৯ দেশ)।
২০১৪ সালে ভারতীয়রা ৫২টি দেশে ভিসামুক্তভাবে যেতে পারতেন। বর্তমানে তা বেড়ে ৫৭টি হলেও র্যাংক ৭৬তম থেকে নেমে গেছে ৮৫তম স্থানে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে গড়ে একজন ভ্রমণকারী ৫৮টি দেশে ভিসামুক্তভাবে যেতে পারতেন, এখন তা বেড়ে ১০৯টি। উদাহরণ হিসেবে চীন গত এক দশকে ৫০ থেকে ৮২টি ভিসামুক্ত গন্তব্য অর্জন করেছে, ফলে তাদের অবস্থান ৯৪তম থেকে ৬০তমে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত জুলাইয়ে ৫৯টি দেশে প্রবেশাধিকার পেয়ে ৭৭তম স্থানে থাকলেও, অক্টোবরে দুটি দেশের প্রবেশাধিকার হারিয়ে ৮৫তম স্থানে নেমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশগুলো দ্রুত নতুন ভ্রমণ চুক্তি করছে, ফলে প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়ছে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা বলেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদেশিদের প্রতি একটি দেশের মনোভাব পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভারত এখন বৈশ্বিক রাজনীতিতে কিছুটা একঘরে অবস্থানে রয়েছে, যা র্যাংকিংয়ে প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরো বলেন, অনেক দেশ এখন অভিবাসন নিয়ে বেশি সতর্ক। ভারতীয়রা প্রায়ই বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হয় বা ভিসার মেয়াদ শেষে থেকে যায়, যা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ পাসপোর্ট ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ভারতের অভিবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও ধীরগতির হওয়ায় বিদেশি দেশগুলোর আস্থা কমেছে। যদিও ভারত সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, যা বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করবে এবং জালিয়াতি কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান উন্নত করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা, নতুন ভ্রমণ চুক্তি করা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
