গণভোটে টালমাটাল রাজনীতি
হরলাল রায় সাগর
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
গণভোট নিয়ে গণবাহাসে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে একমত রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের দিন, না নির্বাচনের আগে গণভোট হবে তা নিয়ে প্রধান দুই প্রভাশালী দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে চলে আসা মদভেদ আরো তীব্র হয়েছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে দেয়ার পর এই বিরোধ প্রকট হয়েছে। সুপারিশে গণভোটের বিষয়ে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেয়া না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এটার এখতিয়ার সরকারের নেই। এছাড়া ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট বাদ এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করাসহ আলোচনার বাইরের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
দলটি বলেছে, নির্বাচনের দিনেই গণভোট হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অপরদিকে জামায়াত বলছে, নির্বাচনের দিন ভোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগেই নভেম্বরে গণভোট হতে হবে। এমনকি গণভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে দলটি। নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে ঐকমত্য কমিশন একটা বাজে কাজ করেছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্য অভিযোগ করেছে, সরকার এখন প্রতারণা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে।
গণভোট আগে না পরে এটা বিএনপি-জামায়াতের কুতর্ক বলে মন্তব্য করেছে এনসিপি। আর গণভোট আগে বা পরে হওয়ার মধ্যে রাজনৈতিক তাৎপর্যগত কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলন। নির্বাচন না হলে এর দায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেছে দলগুলো। গণভোট, জুলাই সনদ ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অনৈক্যে দেশ এখন টালমাটাল। আর এতে সওয়ার হচ্ছে দেশের জনগণও। বাড়ছে অস্থিরতা। বাড়ছে সংশয়ও।
গণভোট বিতর্ক নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সরকারও উদ্বিগ্ন ও বিব্রত। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের সুর হাতাশাব্যঞ্জক। তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতা দলিল পাস করা সরকারের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে। এতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট করার কথা বলা হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।
এ লক্ষ্যে ৭টি সমমনা ইসলামী দল নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে দলটি। এমনকি গতকাল নির্বাচন কমিশনে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে স্মারক লিপি দিয়েছে। আবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নভেম্বরে গণভোট এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আজ শুক্রবারের মধ্যেই আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। এর বাইরে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলটি বলছে, যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, তার বাইরে অনেক বিষয় এখানে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের ভিন্নমত উল্লেখ করা হয়নি। রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে পরিচিত এই জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ৩০টি দল অংশ নিলেও এতে স্বাক্ষর করেনি সরকারের অংশীজন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এবং সিপিবিসহ চারটি বাম দল।
এদিকে সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অংশীজনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে ইসি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বুধবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও নির্বাচন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সভা হয়েছে। যে কোনোভাবেই ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানা ঘটন-অঘটনসহ চ্যালেঞ্জের কথা বলে আসছে সরকার। বুধবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্বাচন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত এক সভায় খোদ প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন বানচালের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যে কোনো ষড়যন্ত্র কিংবা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো সংশয় প্রকাশ করে আসছে। গত কয়েক দিন ধরে তা আরো প্রবল হয়েছে। ফলে জনগণের মাঝে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরাজমান সংশয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিএনপি : জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা- সেক্ষেত্রে (সংসদ) নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময় স্বল্পতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানে আমরা একমত হয়েছি জাতির স্বার্থে, ঐক্যের স্বার্থে। এর বাইরের আমরা কোনো দিনই একমত হব না, প্রশ্নই ওঠে না।’ দলীয় নেতাকর্মী ও জুলাই আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব।
তিনি বলেন, সুপারিশে ‘জুলাই সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এরকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নাই। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুসারে আদেশ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত। সেটি জারি করা এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির।’ কমিশনের সঙ্গে আলোচানয় ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনে’র বিষয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলক জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, এক বছর ধরে যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আলোচনা হয়েছে, তা অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি।’
তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দেয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, এই সব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যে কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’
জামায়াতে ইসলামী : জামায়াতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও পরিষ্কার বার্তার কথা উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটা আদেশ জারি চাই। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চাই। গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। আমাদের বক্তব্য ও বার্তা স্পষ্ট ও পরিষ্কার।
অনেক সেটেল্ড ইস্যু নিয়ে নানা মহল ও কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি ও ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনীতিতে একটা উত্তাপ ছড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করেন তাহের।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, ‘আজকের (গতকাল) ভেতরেই আদেশ জারি হলে খুবই উত্তম। রাত ১২টা, ১টার মধ্যেও আদেশ জারির নজির আছে। যদি কোনো কারণে আজকে না হয় তাহলে অবশ্যই আগামীকাল (আজ) আদেশ জারি করতে হবে। আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি দেরি হয় তাহলে এটি জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এজন্য সরকার ও যারা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তারা অবশ্যই জাতির কাছে দায়ী থাকবেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির বিরোধিতা মেনে অনেক বিষয়েই ‘সেক্রিফাইস’ ও অনেক ‘পয়েন্ট মাইনাস’ করেছেন দাবি করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, এখন তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চান। আপনারা জানেন বিএনপি প্রথমে তো কোনো সংস্কারই চাচ্ছিল না। এরপর জনগণের চাপে তারা সংস্কার কমিশনে অংশগ্রহণ করেছে।
এর আগে গতকাল দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে নভেম্বরে গণভোট এবং সংশোধিত আরপিও বহাল রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে স্মারক লিপি দিয়েছে জামায়াতসহ আটটি ইসলামী দল। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ওই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়ার জন্য গণভোটের প্রস্তাব করেছে। আমরা আটটি দলের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি, জুলাই জাতীয় সনদের টেকসই আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হোক। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) হুবহু বহাল রাখারও দাবিও জানিয়েছি।
নাগরিক ঐক্য : নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সবার ধারণা ছিল, নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমতসহ সংস্কার প্রস্তাবগুলো গণভোটে যাবে। কিন্তু নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে ঐকমত্য কমিশন একটা বাজে কাজ করেছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এনসিপি বলেছে সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখন বিএনপি বলছে সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকার এখন প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এনসিপি : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে। এবার ‘না’ ভোটে স্ট্রিক্ট থাকলে দলটির মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তাই আমরা বলব, ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা করবেন না। তিনি বলেন, বিএনপি অলরেডি ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছেন। তারা বিবাহে রাজিও হয়েছেন, কাবিননামায় সইও করেছেন। এখন তাদের না বলার কোনো অপশন নেই। বিএনপির ভেবেচিন্তে জুলাই সনদে সই করা উচিত ছিল।
অস্পষ্টতার মধ্যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে, না পরে হবে এটা জামায়াত ও বিএনপির কুতর্ক। এই কুতর্ক বাদ দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসুন। জামায়াতের ‘মুখে এক অন্তরে আরেক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষের পিআর, নিম্নকক্ষে এনে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে জামায়াত। আপনারা পুরো জিনিসটাকে নষ্ট করে দিলেন। আপনাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখে একটা অন্তরে আরেকটা- এই ধরনের যে আচার-ব্যবহার রয়েছে সেটা জাতির সামনে স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু গণভোট প্রশ্নে জামায়াত এক সময় বিএনপির সঙ্গে একত্র হয়ে যাবে। জনগণ মনে করে দুই দল মিলে আসলে কুতর্ক করছে।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালার ড্রাফট জনসম্মুখে আনতে হবে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এরপরই এনসিপি এতে সই করবে। আমরা মনে করি, বল এখন ড. ইউনূসের কোর্টে। তিনি যেহেতু আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়, বলা হয়ে থাকে বিদেশি খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে খেলতে এলে পিছলে যায়। কারণ বাংলাদেশের মাঠ পিছলা। কিন্তু এই পিছলা জায়গায় আরো বেশি তেলমর্দন করেন আমাদের আইন উপদেষ্টা। তিনি রাজনীতিবিদদের শুধু পিছলা খাওয়াতে চান। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায়, এর দায়ভার প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলন : গণভোট আগে বা পরে হওয়ার মধ্যে রাজনৈতিক তাৎপর্যগত কোনো পার্থক্য নেই মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আশা করব সরকার কোনো একটি বিশেষ দলের দিকে ঝোঁকে পড়বে না। গণভোট আগে হওয়া আর জাতীয় নির্বাচনের দিনে হওয়ার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্যগত পার্থক্য নেই। আমরা গণভোটের মধ্যে যা কিছু অর্জন করতে চাচ্ছি, সেটা আগে-পরে হলেও একই জিনিস অর্জন করব।
সাকি বলেন, কেবল আমার রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হলো, আমরা যা বললাম তাই হলো। এরকম একটি অবস্থান থেকে গণভোটের বিষয় নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে এটা করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এটা যারা করছেন, বোঝা যাচ্ছে যে মূল বিষয়টা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যে, হয় নির্বাচনকে পেছাতে হবে। অথবা এখানে পরিস্থিতির মধ্যে কোনোরকম জটিলতা সেটাকে আরো গভীর করতে হবে। অথবা বার্গেনিং করতে হবে।
আইন উপদেষ্টা : গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সিদ্ধান্ত এটা কোনো পার্টিকুলার কেউ নেবেন না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ২৭০ দিন আলাপ-আলোচনা করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখা যাচ্ছে, তা হতাশাব্যঞ্জক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতা দলিল পাস করা সরকারের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে। জুলাই সনদ নিয়ে অনৈক্যের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে যেটা বলুক, আমরা ফেব্রুয়ারি প্রথমার্র্ধে জাতীয় নির্বাচন করব। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, নির্বাচিত সংসদের সংস্কার করার কোনো দায়দায়িত্ব থাকবে না, সব অন্তর্বর্তী সরকারকে করে যেতে হবে এ কোনো বেদবাক্য নয়। সরকার যতটুকু পারে করবে। সম্ভব হলে সবই করবে। তবে তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য লাগবে।
