×

সাহিত্য

এ যেন অচেনা এক পৃথিবী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ১২:৫৩ এএম

এ যেন অচেনা এক পৃথিবী

অসীম সাহা

বিশেষ সাক্ষাতকার অসীম সাহা কবি
অসীম সাহা। বাংলা সাহিত্যের ষাট দশকের একজন অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল কবি। তার কবিতা শৈল্পিক স্বাতন্ত্র্য ও কাব্যবীজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, অসাম্প্রদায়িকতায়, বাঙালিত্বে এবং শোষিত শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির বীজতলায় প্রোথিত। নিরাপস আদর্শবাদিতায় নিষ্ঠাবান কবি অসীম সাহা প্রেম, প্রকৃতি ও পরাভবহীন মানুষের মুক্তিচেতনার ধারক। তার লেখালেখি জীবন শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। সেই থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান প্রভৃতি রচনায় সিদ্ধহস্ত কবি অসীম সাহা এখনো অব্যাহতভাবে লিখে চলেছেন। সাহিত্যের সকল বিষয়ে তুখোড় এই লেখক ঋদ্ধতায় বিশ্বাসী বলে অতিপ্রজ হওয়ার দিকে তাঁর মনোযোগ কম। এই কবির করোনাকাল কেমন কাটছে জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, দুই মাস ধরে ঘরে বন্দী। চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি। আমি আর হয়তো সাত দিন চলতে পারবো। বাইরে বেরুতে পারলে হয়তো চালিয়ে নিতে পারতাম। কিছুদিন আগে বিশ হাজার টাকা দিয়ে একটা গান বিক্রি করেছিলাম। তা দিয়ে এতোদিন চলেছি। কিন্তু সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। বড় ছেলেটা সহযোগিতা করত, তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ওই অবস্থায় চাকরিও চলে গেছে তার। বউমাও চাকরি করে। কিন্তু লক ডাউনে আছে সে। এই বয়সে কিভাবে চলব? এদিকে আমার ডায়বেটিকস, হার্টে রিং বসানো, স্টমাক সমস্যাসহ অনেক সমস্যা। এর মধ্যে কাজ করতে গেলে গড়িয়ে গিয়ে মারাই যাব মনে হচ্ছে! এর মধ্যে লিখতে পারছেন কি না জানতে চাইলে এই তুখোড় এই কবি বলেন, লিখতে ইচ্ছে করে। শুরুও করেছিলাম। ভালো এবং অনেক বড় বড় কাজও হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু মাথা কাজ করছে না আতংকে। লেখার মানসিকতাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেধা, মন, মনন কোনোটাই কাজ করছে না। এখন করোনার ভয়ের চেয়ে বেশি ভয় অনাহারে মরে যাওয়ার ভয়। কারণ আমার ওপর চারজন মানুষ নির্ভরশীল। জানি এই দুর্যোগ থেকে না স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো কি না। তারপরও এলোমেলোভাবে কিছু কিছু বই পড়ছি। এমন একটা টালমাটাল অবস্থার মধ্যে আছি। পড়ায়ও মন বসাতে পারছি না। আপনার চেনা পৃথিবীর কতোটা বদল ঘটেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এই কবি বলেন, আমার চেনা পৃথিবীটা অচেনা হয়ে গেছে। কারণ গুণদাসহ আমরা কবিরা মিলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাতিরপুলের একটা জায়গায় আড্ডা দিতাম। যেটার নাম দিয়েছিলাম কবি জংশন। সেখানে মিলিত হয়ে আমরা যে যার মতো চা খেয়ে, আড্ডা দিয়ে গল্পগুজব করে বাসায় ফিরতাম। আমি তো খুব আড্ডাবাজ মানুষ। সন্ধ্যার সেই আড্ডার সময়টা খুব মিস করছি। এখন গুণদাও গৃহবন্দী হয়ে গেছেন, আমিও। আমাদের সেই চেনা পৃথিবী পুরোপুরিই অচেনা হয়ে গেছে। এই অচেনা পৃথিবীতে আর কতো ভালো লাগতে পারে? আমরা তো চেনা পৃথিবীর সমাজবদ্ধ মানুষ। অচেনা পৃথিবীর মুখোমুখি তো কখনও হইনি। এ যেন এক অন্যরকম অচেনা পৃথিবী! সেই কারণে অনেক কষ্ট হচ্ছে। একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। চেনা পৃথিবীটা ফিরে পাবার জন্য অপেক্ষা করছি। এই দুর্যোগটা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারবে কীনা জানতে চাইলে কবি অসীম সাহা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করছি, এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওটা কঠিন হবে। কারণ আমরা যেভাবে অনিয়মের মধ্যে আছি, কোনো লক ডাউন, সামাজিক দূরত্বসহ কোনো কিছুই মানছি না। এই না মানা নিয়ে অনেকে গৌরববোধও করছি। ফলে এই বিপর্যয় আরো তীব্র হবে বলেই আমার ধারণা। ক্রমশ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এটা হয়তো ঈদ পর্যন্ত ঠেলে ঠুলে নিয়ে যাবে। তারপর সরকার কঠিন হতে পারবে বলে মনে হয় না। এরকম চলতে থাকলে সরকারও পরিস্থিতি ঠেকাতে পারবে না, পাবলিক তো পারবেই না। তারা তো এর মধ্যেই আছে। তিনি বলেন, একাত্তরের বিপর্যয়ের চেয়ে এই করোনা মহামারী আরো বড়ো বিপর্যয়। একাত্তরে তো ঘর থেকে বেরুতে পেরেছি। শরনার্থী শিবিরে গিয়ে ত্রাণ নিয়েছি। নিতে যেতে তো পেরেছি। গাড়ি ঘোড়া চলেছিল। মানুষের সঙ্গে মানুষের কথা বলার সুযোগ ছিল। গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। গ্রামে একধরণের সঙ্গ ছিল, সমাজ ছিল। এখন তো সেরকম সুযোগও নেই। এই অবস্থা তো কখনও হয়নি। আমার এই বাহাত্তর বছরের জীবনে আমি এইরকম বিপর্যয় কখনও দেখিই নি। এটা মুক্তিযুদ্ধকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে, মুক্তিযুদ্ধে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকে একাত্তরকেও ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে এক থেকে দুই কোটি মানুষ মারাও যেতে পারে করোনায়। আমার মতে, লক ডাউন মানে লক ডাউন। সিরিয়াসলি লক ডাউন থাকতে হবে। কিন্তু হচ্ছে কি? আমরা মানছি কেউ? আরেকটা কথা, সেনাবাহিনী মানে আমাদের বিশেষ বাহিনী। একটা সময় রাস্তায় আর্মী নামলে ভয় পেতাম। এখন দেখি তাদেরকে মানছেও না। মানে কি? এরচে বড়ো বিপর্যয়ও যদি আসে এবং আর্মি নামে, লোকজন মানবে না! আইন শৃংখলা বাহিনীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবাই। তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এটা ভালো হলো না। আর্মির যে ভূমিকা হওয়া উচিত তারাও তা করছেন না। তারা লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের মতো অশিক্ষিত, অসচেতন বাঙালি জাতিকে কিছু বোঝানো সহজ! তাদের যেখানে শক্তি প্রয়োগের দরকার তা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আইডিইবিতে ইউনেট বাংলাদেশ গেমিং ও ইস্পোর্টস সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত

আইডিইবিতে ইউনেট বাংলাদেশ গেমিং ও ইস্পোর্টস সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত

জেসিআই বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি

জেসিআই বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি

যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের হৃদয় থেকে দুর্নীতির ধারণা মুছে যাক: এসিএম সভাপতি

যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের হৃদয় থেকে দুর্নীতির ধারণা মুছে যাক: এসিএম সভাপতি

সিলেটের গোলাপগঞ্জের নতুন ইউএনওকে হত্যার হুমকি

সিলেটের গোলাপগঞ্জের নতুন ইউএনওকে হত্যার হুমকি

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App