ইরানের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো হুতি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০২:০৪ পিএম

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় দুই দিনে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। ইরানের পাশাপাশি ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবার (১৪ জুন) রাতে ইরানের পাল্টা আঘাতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে হুতিদের এই হামলায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ইসরায়েলজুড়ে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শনিবার রাতে ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় এলাকায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। হুতিরা নিজেদের টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরাহতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করে জানায়, ইরানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে হামলায় ‘ফিলিস্তিন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এই হামলা ছিল গত এক সপ্তাহের মধ্যে হুতিদের দ্বিতীয় হামলা। এর আগে ১০ জুন ইসরায়েল লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তারা। তার জবাবে ইসরায়েল হোদেইদা বন্দরে বিমান হামলা চালায়।
হুতিদের শীর্ষ নেতা আবদুল মালিক আল-হুতি এক বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন প্রতিহত করা কেবল একটি দেশের দায়িত্ব নয়, বরং পুরো অঞ্চলের স্বার্থেই তা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, শত্রুর দমন-পীড়ন ঠেকানো ও অধিকারের লঙ্ঘনের অপমার্জন করা পুরো অঞ্চলজুড়েই গুরুত্বপূর্ণ। গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা প্রায় দেড় বছর ধরে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছি।
আরো পড়ুন : নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বড় হুমকি: এরদোগান
গত মার্চে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর হুতিরা হামলা স্থগিত করলেও, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করলে তারা পুনরায় আক্রমণ শুরু করে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, শনিবার রাতে ইরানের সামরিক বাহিনী তেহরানের শাহরান তেল স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ইসরায়েলি বিমান হামলার জবাবে তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালায়। এতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। জেরুজালেম ও হাইফা শহরের আকাশে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা যায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তেল আবিব ও আশপাশের এলাকায় ছোড়া শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে বেশিরভাগই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলি মিডিয়ার তথ্যমতে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজন বসতি স্থাপনকারী (সেটলার) নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বাত ইয়াম এলাকায় আহত ৭৪ জনের মধ্যে ৩ জন গুরুতর, ৫ জন মাঝারি এবং ৬৬ জন হালকা আহত। এছাড়াও রেহোভত এলাকায় আহত ২৮ জনের মধ্যে ২ জন গুরুতর, ৭ জন মাঝারি ও ১৯ জন হালকা আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এর একটি ভবনে আগুন ধরে যায়, যেখানে উচ্চ নিরাপত্তার গবেষণাগার ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আগুনে ভবনের ভেতরে অনেকে আটকা পড়েছে। বাত ইয়াম এলাকার এক ভবনের ধ্বংসস্তূপে অন্তত ৩৫ জন আটকা পড়ে, যাদের বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার, ইরানের ভেতরে ইসরায়েল ‘বিনা উসকানিতে’ বিমান হামলা শুরু করে বলে দাবি করেছে তেহরান। হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুই দিনে এসব হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন শিশু।
ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনার আবহে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের জবাবে ইরান ও তাদের মিত্র হুতিদের একযোগে আক্রমণ পরিস্থিতিকে আরো ঘনীভূত করেছে।