নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যে পরামর্শ দিলেন সিইসি আউয়াল
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
পুরনো ছবি
পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল 'সুষ্ঠু নির্বাচন' কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শেষবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সিইসি।
তবে এদিনও 'সুষ্ঠু নির্বাচন' কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে লিখিত পরামর্শ দেন আউয়াল কমিশন। সরাসরি না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে একদলীয় হয়েছে- সেটিও স্বীকার করেন সিইসি। বেলা ১২টায় লিখিত বক্তব্য শুরু করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এসময় দুজন কমিশনার সঙ্গে থাকলেও বাকি দুজন নিজেদের রুমেই অবস্থান করেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়-দায়িত্ব সব সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের উপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সব সময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, কমিশনের সদস্যরা সংবিধান মেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আমাদের কর্মকালে আমরা গণমাধ্যম, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ আবশ্যক সবার সহযোগিতা পেয়েছি। কৃতজ্ঞচিত্তে তা স্মরণ করছি। বর্তমান ও অতীত থেকে আহরিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি।
আরো পড়ুন: রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সেন্টমার্টিনে যাওয়া যাবে না
হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয় ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেইসঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মধ্যে ৩/৫ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচন প্রতিক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। অধিকন্তু প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরো সুনিশ্চিত হতে পারে।
শেষ কর্মদিবসের সংবাদ সম্মেলনকে সাংবাদিকদের সঙ্গে 'সৌজন্য বিনিময়' হিসেবে অভিহিত করে আউয়াল কমিশন। যদিও লিখিত বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমের সামনেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। বক্তব্য শেষে কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে চলে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল। একযোগে এমন পদত্যাগ কমিশনের ইতিহাসে নজিরবিহীন। পদত্যাগের পরপরই কমিশন ভবন ত্যাগ করেন তারা।
তবে আগেই থেকেই বাইরে অবস্থান করা বিক্ষুব্ধ মানুষ সদ্য বিদায়ী আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময় অনেকে ধাওয়া দেন বিদায়ী কমিশনারদের।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিল। এই কমিশনের কমিশনাররা হলেন- মো. আহসান হাবীব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। শুরু থেকেই আউয়াল কমিশন ঘিরে ছিল নানা বিতর্ক। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও কমিশনাররা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি বলে অভিযোগ ওঠে নানা সময়।
