পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লা বৈঠক করলেন। সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক দফতর ‘নবান্নে’ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফুল সিকদার ও রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। হাইকমিশনারের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয় বাংলাদেশের মিষ্টি, শাড়ি-সহ আরও বেশ কিছু উপহার সামগ্রী। এটি ছিল ভারতের কোনো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। 

সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এই সাক্ষাৎ নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষাপটে এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৌশলগত বার্তা দিয়েছে। একই সঙ্গে, এই সাক্ষাৎ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন গভীর হওয়ায়, এমন সংবেদনশীল ইস্যুতে সংলাপ ও কূটনৈতিক আন্তরিকতা ভবিষ্যতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারে।

প্রসঙ্গত, ৯ বছর পর বাংলাদেশের কোনো হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ২০১৬ সালে তৎকালীন হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি। সেই বৈঠককেও ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেছিল দুই পক্ষ। গত ৯ বছরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের আর কোনও বৈঠক হয়নি। গত প্রায় এক বছরে পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে। আর এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর বারবার হামলার অভিযোগ করছে ভারত।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। এই ঘটনার নিন্দা করে সরব হন মমতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি চিঠিও দেন। এই আবহে এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আলাপচারিতায় কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খোলেনি কোনো পক্ষই। যদিও কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার এই বৈঠককে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎকার’ বলেছেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

পরে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। সাক্ষাৎকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরো গভীর ও জোরদার করার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের এ সাক্ষাৎ ছিল দেশটির কোনো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর আগে গত ২৯ মে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ।

এর আগে সকালে হামিদুল্লা কলকাতার বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শন করেন। সেখানেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দু’ঘণ্টার মত বৈঠক করেন তিনি। তারপরই সিডিউল অনুযায়ী বিকেলে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে যান হাইকমিশনার হামিদুল্লা। তিনদিনের সফরে গত রবিবার কলকাতায় এসেছেন হাইকমিশনার। বুধবার সকালেই ফিরে যাবেন দিল্লিতে। গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় সরাসরি দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন হাইকমিশনার। সোমবার বেলায় যান কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে। প্রায় ২ঘন্টার বেশি অবস্থান করেন সেখানে। পরে বিকেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ সফরে তৃতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক রাজ্যসভার সাংসদ সদস্য জহর সরকারের একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া ব্যাক্তিগত কিছু কাজ রয়েছে তার।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সাক্ষাতে সীমান্ত এলাকার নানা সমস্যা,আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের  সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙচুর নিয়ে মমতার সামনে হাইকমিশনের ‘প্রকৃত তথ্য’ তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া দেয়া নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি ও পুশইনের মত জ্বলন্ত সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।