×

জাতীয়

জুলাই ঘোষণাপত্র: অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে, থাকছে ৭ নভেম্বর

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:২০ এএম

জুলাই ঘোষণাপত্র: অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে, থাকছে ৭ নভেম্বর

‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে সরকার। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে বহুল আলোচিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে সরকার। দীর্ঘ সাত মাসের আলোচনার পর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতামত অন্তর্ভুক্ত করে এবার সংবিধানে অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, দলগুলো একমত হলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। তাতে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে সংবিধানে।

বিতর্ক এড়াতে গোপনীয়তার সঙ্গে প্রণীত খসড়া ঘোষণাপত্রে মোট ২৭ দফা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়েছে। ঘোষণাপত্রে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মতামতে পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব’, ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রে পুনঃপ্রবর্তনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তিনটি দলকে ঘোষণাপত্রের খসড়া দিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলেছে সরকার। তবে একটি সূত্র থেকে খসড়ার বিস্তারিত জেনেছে দেশের প্রথম সারির একটি সংবাদমাধ্যম।

প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, অভ্যুত্থানের চেতনায় দেশ গড়তে সংবিধানকে বাতিল বা সংশোধন করা হবে। তবে চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, মানবিক ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতে সংবিধান সংস্কার করা হবে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন, আওয়ামী লীগের গুম-খুন-দুর্নীতির বিচারের অঙ্গীকার রয়েছে। অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের স্বীকৃতি রয়েছে। তবে ঘোষণাপত্রে দল বা ব্যক্তির নাম নেই।

আরো পড়ুন : জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাকে সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করতে চায় তারা। তবে পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদ এবং ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে। তবে এনসিপি চায়, সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকুক এবং পুরো ঘোষণাপত্রই সংবিধানে সংযুক্ত থাকুক। জামায়াত নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও জুলাই অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপি এর বিরোধিতা করে জানিয়েছে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তপশিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে। তাই জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয়। বিএনপি এ অবস্থান নিলেও ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে।

সাত মাস ধরে প্রক্রিয়া

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রচেষ্টা চলছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের দল দ্রুততম সময়ে ঘোষণাপত্র চাইলেও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি।

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করতে চেয়েছিল। তবে এর আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রনেতাদের ডেকে জানান, ঐক্যের স্বার্থে সরকার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দলকে নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।

গত ১৪ জানুয়ারি সরকার ঘোষণাপত্রের প্রথম খসড়া তৈরি করে। তখন এর ওপর ৩২টি দলের মতামত নেওয়া হয়। ছাত্রনেতারা ১৬ দফা-সংবলিত একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করে। বিএনপিও একটি খসড়া তৈরি করেছিল।

জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে আন্দোলন শুরু করেন এনসিপি নেতারা। এ আন্দোলনে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ আরো কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।

গত ১০ মে রাতে যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করবে সরকার। এই সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ১ জুলাই। গত ১৩ জুলাই বিএনপি এবং এনসিপিকে ঘোষণাপত্রের খসড়া পাঠায় সরকার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জানুয়ারির মতো এবারও খসড়া পাওয়ার এক দিনের মধ্যে বিএনপি মতামত জানিয়েছে।

সূত্রের খবর, খসড়া না পাওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় জামায়াত। পরে এ দলটিকেও ঘোষণাপত্র প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতামতে গত রোববার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের জানান, তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে শিগগির সরকারকে মতামত জানাবেন।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের দাবি অনুযায়ী ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে হবে।

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় কী আছে?

প্রথম খসড়ায় সাতচল্লিশের দেশভাগের উল্লেখ ছিল। এবার সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো শুরুতেই বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ২৩ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তা বাহাত্তরের সংবিধানে মানা হয়নি। তৃতীয় দফায় পঁচাত্তরের একদলীয় বাকশাল কায়েমের উল্লেখ রয়েছে। পরের দফায় বলা হয়েছে, সিপাহি-জনতার বিপ্লবে বাকশালের অবসান হয়। পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরে। যদিও আওয়ামী লীগ শাসনামলে উচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

খসড়া ঘোষণাপত্রের ষষ্ঠ দফায় এরশাদের সামরিক ও স্বৈরশাসনের বর্ণনা রয়েছে। পরের দফায় বলা হয়েছে, একানব্বইয়ে গণতন্ত্র পুনর্বহাল হয়। অষ্টম দফায় এক এগারোকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

১৪তম দফায় বলা হয়েছে, তিনটি ভুয়া নির্বাচনে ক্ষমতা দখলকারী সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ১৭তম দফায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী মত, জনগণকে চরম নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। ১৯তম দফায় বলা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনতা অভ্যুত্থান করেছে। পরের দুটি দফায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, জনতার অভিপ্রায়ে সরকার গঠিত হয়েছে।

২৩তম দফায় অঙ্গীকার করা হয়েছে, আগামীর বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পরের দফায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলের সকল গুম, খুন, দুর্নীতির বিচার হবে। ২৫তম দফায় বলা হয়েছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংস্কার করা হবে। পরের দফায় বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে সংবিধানে। শেষ এবং ২৭তম দফায় বলা হয়েছে, জুলাই ঘোষণা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ঘুরে-ফিরে চলে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা

গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ঘুরে-ফিরে চলে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা

‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য পাল্টালেন উপদেষ্টা মাহফুজ

‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য পাল্টালেন উপদেষ্টা মাহফুজ

মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ না হলে স্বাক্ষর নাও করতে পারে এনসিপি

মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ না হলে স্বাক্ষর নাও করতে পারে এনসিপি

দ্রুততম ৫ উইকেট শিকারের বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন মহেশ

দ্রুততম ৫ উইকেট শিকারের বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন মহেশ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App