×

জাতীয়

২১ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী ও ২৩ আগস্ট আসছেন উপপ্রধানমন্ত্রী

কী বার্তা নিয়ে আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

কী বার্তা নিয়ে আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার (বাঁয়ে) ও বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান (ডানে)। ছবি: পাকিস্তান সরকারের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া

মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২১ আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। আর উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন ২৩ আগস্ট। পাকিস্তানের দুই মন্ত্রীর সফর, বিশেষ করে ইসহাক দারের ঢাকা আসার রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। সবমিলিয়ে কূটনীতিতে এ এক মেরুকরণ ঘটছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইসহাক দারের দুই দিনের ঢাকা সফর যে ২৩ আগস্ট শুরু হবে, তা অবশ্য আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। গত বুধবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২১ থেকে ২৪ আগস্ট ঢাকা সফর করবেন। এই সফরে বাণিজ্য, হালাল ফুড প্রসেসিং, কানেকটিভিটি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের পাশাপাশি কৃষি, প্রতিরক্ষা, খাদ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আলোচনায় সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে যাবে সফরের ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিগত হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছায়। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন পররাষ্ট্রনীতিতে যোগ দেয় ঢাকা। এর ফলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে রীতিমতো অস্থিরতা চলছে। এর বিপরীতে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন গতি পায়। এমন পরিস্থিতিতে ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসন্ন সফরের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। বহু বছর পর আবার দুদেশের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদেশের সম্পর্ককে নতুন এক যাত্রা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা সম্পর্কের এক নতুন যাত্রা শুরু করেছি। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে যেকোনো ইস্যুতে আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছি। এমনকি ১৯৭১ নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম ডনের এক সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, ৭১-এর মতো ইস্যু, যা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সেসব ইস্যু এড়িয়ে না গিয়ে বরং সামনে রেখে আলোচনা এগিয়ে নেয়া উচিত। ইসহাক দারের আসন্ন সফরের গুরুত্ব এবং বৈঠকের এজেন্ডা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এ সফরটি একটি রাজনৈতিক সফর। এ সফরের গুরুত্ব অনেক। ইসহাক দার পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরই তার স্থান। সুতরাং দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তার এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের নতুন সূচনা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার দুবার দেখা হয়েছে। দুই নেতাই সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের নানা পর্যায়ের আলোচনা সক্রিয় করতে উদ্যোগী হয় পাকিস্তান। দুই দেশের দেড় দশকের শীতল সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসহাক দার ঢাকা সফরে আসছেন। তিনি তার সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

জাম কামাল খান ও ইসহাক দারের পর পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব ঢাকায় আসতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে অংশ নিতে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের ঢাকায় আসার কথা। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি বৈঠক ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বার্তা থাকবে ইসহাক দারের সফরে। দুই দেশের দেড় দশকের শীতল সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসহাক দার ঢাকা সফরে আসছেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের আনুষ্ঠানিক বৈঠক ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারি নথি পর্যালোচনা করে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সফর বা বৈঠকের কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে সম্পর্ক ও সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর একাধিক সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। সইয়ের তালিকায় থাকা সমঝোতাগুলো হলো-দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।

গত মাসে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন রাজা নাকভি ঢাকায় এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সফরের পর দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসাবিলোপ চুক্তি সইয়ের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। দুই দেশ চুক্তির খসড়া বিনিময় করেছে। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক স্তরে অনুমোদন পেলে ইসহাক দারের সফরের সময়ই এই চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে চাঙা করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে জাম কামাল খানের ঢাকা সফরের সময় এই সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বাণিজ্যবিষয়ক এই ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবেরা। 

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করছি না। অন্য অনেক দেশের মতোই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। যেখানে ব্যবসা, বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষের চলাচল সুগম করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের প্রয়োজন নেই। অতীতে অকারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করার সময় অমীমাংসিত তিন বিষয় আলোচনার টেবিলে থাকছে।  

তার মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্কের জন্য আমরা কাজ করছি। ইসহাক দারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতেই কথা বলব। ৭১-এর বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। তবে একটি ইস্যুর জন্য অন্যসব ইস্যু আটকে থাকবে না। ঢাকা-ইসলামাবাদ ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক কেমন হবে, তা ভারত নির্ধারণ করবে না। কারণ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করে দিই না।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

গণঅভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস

বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন শচীনপুত্র অর্জুন, পাত্রী সানিয়াকে নিয়ে হইচই

বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন শচীনপুত্র অর্জুন, পাত্রী সানিয়াকে নিয়ে হইচই

অবৈধ সম্পদ: সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মামলা

অবৈধ সম্পদ: সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মামলা

সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ

সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App