প্রখ্যাত চিন্তক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২২ এএম

দেশের বিশিষ্ট চিন্তক, লেখক ও প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর। ছবি : সংগৃহীত
দেশের বিশিষ্ট চিন্তক, লেখক ও প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, আজ অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। বিস্তারিত আমরা পরে জানাতে পারব।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বামপন্থি রাজনীতিক এবং তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও উমর একজন লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক হিসেবে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। ২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পান, তবে নিজে তা গ্রহণের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানান।
উমরের উল্লেখযোগ্য গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ (তিন খণ্ড), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি, বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক।
আরো পড়ুন : পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু
বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন প্রগতিশীল নেতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উমর ও তার পিতা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি চট্টগ্রাম কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পার্টির অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও মতাদর্শগত কারণে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর বাংলাদেশের লেখক শিবির, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতি ও সমাজসেবায় অবদান রাখেন।
বদরুদ্দীন উমর ২০২৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলেও নিজ উদ্যোগে তা গ্রহণ করেননি। তিনি এক বিবৃতিতে জানান, ১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, আমি সেগুলো গ্রহণ করিনি। বর্তমান সরকারের দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।