জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা, সংস্কার ও গণতন্ত্র ইস্যু

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১২ পিএম

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘ সাধারণ সভার (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে জাতীয় বক্তব্য উপস্থাপন করবেন, উচ্চস্তরের একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ দেবেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস তার বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা এবং ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ সুষ্ঠু, অবাধ ও সর্বজনীন নির্বাচন আয়োজনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, এ বছর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে চারজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা অংশ নেবেন। তারা হলেন-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা হুমায়ূন কবির, জামায়াতে ইসলামীয়ের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের ইউএনজিএ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ক উচ্চস্তরের সম্মেলন আয়োজন করবে। এই সিদ্ধান্তটি প্রফেসর ইউনুস গত বছর করা প্রস্তাবের পর এসেছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মত সমর্থন পেয়েছে।
সম্মেলনের আগে বাংলাদেশ গত মাসে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথমবারের ‘পার্টনারস ডায়ালগ’ আয়োজন করে। তৌহিদ হোসেন বলেন, এটি অভূতপূর্ব উচ্চস্তরের বৈঠক, এবং এ বছরের প্রথদ দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, প্রদর্শন করে যে বহু বৈশ্বিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় দৃঢ়ভাবে রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর যুব কার্যক্রমের ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চস্তরের বৈঠকেও অংশ নেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের যুবকরা, যারা গত বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা এখনও সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশের দর্শনের চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ সরকারকে তার তরুণ প্রজন্মের আশা ও আকাঙ্ক্ষা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরার সুযোগ দেবে। বাংলাদেশ মহিলাদের, শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনাতেও অংশ নেবে, যা শান্তিরক্ষার শীর্ষস্থানীয় দেশের হিসেবে দেশের অবদানকে প্রতিফলিত করে।
প্রফেসর ইউনুস আরও বিশ্ববিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভাষণ দেবেন, যেমন শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, অবৈধ অর্থ প্রবাহ, নিরাপদ অভিবাসন ও অভিবাসীর অধিকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে টেকসই প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির আহ্বান। সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা টঘ মহাসচিবের স্বাগত সংবর্ধনা, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়োজনকৃত সংবর্ধনা এবং বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।
তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, সাধারণ রীতি অনুযায়ী, সূচিতে নতুন বৈঠক যোগ হতে পারে বা শেষ মুহূর্তে কিছু বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি নিজেও একাধিক বহুপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, যেমন কমনওয়েলথ বিদেশ সচিবদের বৈঠক, শান্তি নির্মাণ কমিশন মন্ত্রিসভা, জি৭৭ ও চীন বিদেশ সচিবদের বৈঠক, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় বৈঠক, বিমসটেক, সিআইসিএ, গেস এলডিসি মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, এবারের ইউএনজিএ অধিবেশন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তার সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং জাতীয় অগ্রাধিকার তুলে ধরতে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আশা করছে, বাংলাদেশের স্বার্থ সংক্রান্ত ইস্যুতে বৈশ্বিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
এছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রফেসর ইউনুসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি তাকে প্রধান বিশ্বমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের আমন্ত্রণ এবং এসআরবি কানেক্ট ও এশিয়া সোসাইটি প্রোগ্রামে সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ এনেছে। প্রধান উপদেষ্টা একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সফর করবেন এবং ২ অক্টোবর ঢাকায় ফিরে আসবেন।
জাতিসংঘ সাধারণ সভার সাধারণ বিতর্ক ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর এবং ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশ্ব নেতারা ‘বেটার টুগেদার: ৮০ ইয়ার্স এন্ড মোর ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট এন্ড হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক বিষয়ের অধীনে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের অবস্থান তুলে ধরবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিদেশ সচিব আসাদ আলম সিয়াম, এবং ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মাজমুদার সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।