জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন সংকট

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়জুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জুলাই সনদ। গত জুলাই মাসে সনদ সইয়ের লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারিত না হওয়ায় তা আটকে আছে। এ কারণে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে।
তবে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঘিরে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে কমিশনের সামনে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে কমিশন ইতোমধ্যে তৃতীয় দফায় আলোচনা শুরু করেছে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে।
সাংবিধানিক আদেশে আইনি বৈধতা প্রদান এবং ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। তবে বিষয়টি ঘিরে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলটির দাবি, নির্বাচনের আগেই গণভোট সম্পন্ন করে তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কিন্তু গণভোটের ফলাফল অনিশ্চিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা জানিয়েছে, গণভোট নয় বরং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ইউরোপীয় মানবাধিকার প্রধান
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনে করে, সনদ বাস্তবায়নে একের পর এক নতুন প্রস্তাব ঐকমত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দলটি সাংবিধানিক সংস্কার নির্বাচিত সরকারের হাতে রাখার দাবি জানিয়েছে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত সরকারের হাতে সাংবিধানিক সংস্কার ন্যস্ত করার দাবি জানালেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে এসেছে। তবে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের পক্ষে নয় দলটি। তাদের অবস্থান, বৈধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া উদ্ভাবিত হলে তাতে সায় দেবে বিএনপি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন, এরপর গণভোট হবে। দুটি কাজই নির্বাচনের আগে সম্পন্ন করতে হবে। এতে রাজনৈতিক স্বীকৃতি যেমন আসবে, তেমনি আইনি ভিত্তিও তৈরি হবে। তখন জাতীয় নির্বাচনও স্বচ্ছভাবে সম্ভব হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা মনে করি গণপরিষদের মধ্য দিয়েই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব। সাংবিধানিক আদেশ জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হলেও পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে গণভোটে ভিন্ন ফলাফল এলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংবিধান সংশোধনের কাজ নির্বাচিত সংসদের জন্য রাখতে হবে। এর বাইরে নতুন নতুন বাস্তবায়ন পদ্ধতি আনা হলে তা আমাদের ঐকমত্যকে দুর্বল করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিদ্যমান সংবিধান বহাল থাকার পরও যদি নতুনভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। আলোচনার মাধ্যমে যদি বৈধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়, সেটি নিয়ে আমরা একমত হবো।