ফতোয়াবাজদের সঙ্গে জোট গঠনের প্রবণতা, অভিযোগ নারীপক্ষ’র
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
ছবি : ভোরের কাগজ
নির্বাচনের স্বার্থে ফতোয়াবাজ ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর জোটবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নারীপক্ষ। নারীপক্ষের সদস্য এডভোকেট কামরুন নাহার বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আগেও ছিল এখনো হচ্ছে। সামনে আরো বেশি হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং নির্বাচনী কৌশল হিসেবে ফতোয়াবাজ এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর জোটবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা আমরা আগেও দেখেছি, এখনো দেখছি। এখানে আমাদের কাজ করতে হবে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নারী সংগঠন সমূহের ৭ম জাতীয় সম্মেলনের প্রাপ্ত বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য রাশেদা হোসেন, সামিয়া আফরিন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারীপক্ষের সদস্য অনিমা দে।
কামরুন নাহার বলেন, ধর্ম ও প্রথাভিত্তিক যে পারিবারিক আইনগুলো বলবৎ রয়েছে আছে সেগুলো বাতিল করে সব নাগরিকের জন্য একটি সমতাভিত্তিক সার্বজনীন আইন প্রণয়নের দাবি নারীপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছে। আমরা মনে করি, নারী আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মীদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। নারীর ইস্যুগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে আনতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর আগেও তা করেছে। রাজনৈতিক ইশতেহারে নারীর ইস্যুগুলো যেমন থাকা জরুরী, আলোচনায় আসা জরুরী তেমনি নারীকে পশ্চাদমুখী করার যে প্রবণতা, নারীর অধিকারের পরিপন্থী বিষয়গুলো প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে একাট্টা হতে হবে।
গীতা দাস বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দল এবং সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি করে আসছি। আমাদের দাবি তা ৩৩ শতাংশ করার। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আমরা যখন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি তখন রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে ৫ শতাংশ নারী আসন দেবার কথা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি। তাদের আসন ঘোষণায় দুই একজন নারী নাম থাকলেও শতাংশ বিচার তা খুবই কম। ইসলামিক দলগুলো কোনো নারীকেই মনোনয়ন দেয়নি। অথচ এরা ওয়াদা করেছিল তারা নারীদের আসন দিয়ে সম্মান জানাবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারীপক্ষ দেশে ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর নারীদের নিয়ে একটি মহা সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। সারাদেশে তৃণমূলের নারী সংগঠনগুলোকে নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর এই অনুষ্ঠান সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন সংগঠনের ৩’শ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিল। ৩টি প্ল্যানারি অধিবেশনে- নারী আন্দোলনের স্বতন্ত্র ধারা বিনির্মাণ ও আন্দোলনকে শক্তিশালী করার উপায়; নারী আন্দোলনের জন্য সম্পদ আহরণ ও সম্ভাব্য উৎস; বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা; সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব পর্যায়ে নারীর স্বাধীন ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর; তৃণমূল নারী সংগঠনসমূহের সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধানের কৌশল; আন্তঃপ্রজন্মের কথোপকথন: অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও পারস্পরিক প্রত্যাশা; নারী অধিকারভিত্তিক সংগঠন ও নারী রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা; বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল-এই ৮টি বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব কর্মশালা থেকে যে সুপারিশগুলো এসেছে সেগুলো হলো-সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও নারীর স্বাধীন ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠায় সংগঠিত হতে হবে, আওয়াজ তুলতে হবে, যথাযথ জায়গায় দাবী উপস্থাপন এবং দেন-দরবার করা; নারী আন্দোলনের স্বতন্ত্র ধারা বিণির্মানে সর্বস্তরে সহায়ক শক্তি বাড়াতে হবে এবং তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; নারী আন্দোলনের জন্য সম্পদ আহরণ ও সম্ভাব্য উৎস যেমন: মানবসম্পদ, নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন জোট, স্থানীয় সম্পদ, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ইত্যাদি চিহ্নিতকরণে ও অর্জনে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া।
এছাড়াও বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগের, যেমন- শ্রম আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যৌনকর্মীদের আন্দোলন এর সঙ্গে নারী আন্দোলনকে সংযুক্ত করা; আন্তঃপ্রজন্মের মধ্যে যোগসূত্রতা স্থাপনের মাধ্যমে নারী আন্দোলনের ধারাকে চলমান রাখা; তৃণমূল নারী সংগঠনগুলোর নিজেদের আত্মমূল্যায়নের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে উত্তরণের পদক্ষেপ নেয়া; নারী আন্দোলনের ইস্যুকে রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা।
