বিডিপিএফ-এর ভার্চুয়াল আলোচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের দাবি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৭ এএম

বিডিপিএফ-এর ভার্চুয়াল আলোচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের দাবি
বর্ষপূর্তি গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে “গণতন্ত্র ও শিক্ষা সংস্কার একই সূত্রে গাঁথা” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ইন ফিনল্যান্ড (বিডিপিএফ)। রবিবার ফিনল্যান্ড সময় দুপুর ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার শুরুতে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ড. মো. আব্দুল হাই (সদস্য, প্রোগ্রাম) এবং ড. জি এম আতিকুর রহমান (সদস্য সচিব, বিডিপিএফ)। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিডিপিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. মো. মঞ্জুরে মওলা।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাইফুল ইসলাম, এবং বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কুদরত-ই-জাহান।
আলোচকরা বলেন, শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর তাই টেকসই উন্নয়ন ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অত্যাবশ্যক। আলোচনায় উঠে আসে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত হয়নি, যা উদ্বেগজনক।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “শিক্ষা খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, ও স্বজনপ্রীতি দূর করতে একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন জরুরি।” তিনি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, অবাধ নির্বাচন এবং জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও জোর দিয়ে তুলে ধরেন।
ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “গত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বহু মানুষ মত প্রকাশ ও লেখালেখির কারণে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমিও তাদের একজন, আমাকে ভিন্নমতের রাজনীতি চর্চা ও লেখালেখির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।” তিনি বলেন, আর যেন এদেশে কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন না ফিরে আসে, সেই লক্ষ্যে সকলকে গণতান্ত্রিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধে শিক্ষিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
অধ্যাপক ড. কুদরত-ই-জাহান বলেন, “গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যসূচিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ—যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা, এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ—অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।” তিনি আরও বলেন, কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন বিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, ড. বদরুজ্জামান খোকন, ড. মঞ্জুর আলম, অধ্যাপক ড. মো. তরিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ জুয়েল, ড. আনিসুর রহমান ফারুক, ড. জুলিয়াস ফ্রান্সিস গোমেজ, ড. কামরুল হোসেন, ড. এ কে এম সাইফুল্লাহ, ড. এ এম এইচ সামসুজ্জোহা, ড. সানাউল হক, ড. হিজবুল আলম, গবেষক শাহ আলম, প্রকৌশলী আব্দুল মমিন তালুকদার, শিক্ষিকা মাহিষা ফাহমিদা জুঁই, সাংবাদিক শফিক, সমাজসেবক আশরাফুল আলম, ডক্টরাল রিসার্চার ফয়সল মোকাম্মেল, রেদওয়ান ইসলাম, স্নেহাশিস ভৌমিক প্রমুখ।
বক্তারা সম্মিলিতভাবে মত দেন, শিক্ষার জোরালো সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ছাড়া একটি জাতিকে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।