×

মুক্তচিন্তা

পাকিস্তান পররাষ্ট্রনীতির পুনর্জন্ম ঘটাচ্ছে- এমন নয়

Icon

এরিক শাহজার

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম

পাকিস্তান পররাষ্ট্রনীতির পুনর্জন্ম ঘটাচ্ছে- এমন নয়

ছবি : সংগৃহীত

মনে হচ্ছে পাকিস্তান ভূ-রাজনৈতিক বাতাসকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। গত মাসে, পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই সাহসী চুক্তির অধীনে, একজনের ওপর আক্রমণকে উভয়ের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে- একটি প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ অঞ্চলে নিরাপত্তা গ্যারান্টির এক নাটকীয় বৃদ্ধি। একই সময়ে, ইসলামাবাদ নীরবে বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলোর নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে এবং গভীরতর রপ্তানি চুক্তি অন্বেষণ করছে। ওয়াশিংটনও, তার পক্ষ থেকে, পাকিস্তানকে কেবল একটি পার্শ্বিক অস্বস্তির চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে বিবেচনা করতে নতুন করে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।

এই পদক্ষেপগুলো একটি গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। ইসলামাবাদ ও রিয়াদের ভাষ্যকাররা এটিকে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রনীতির পুনর্জন্ম, দেশের কৌশলগত অপরিহার্যতাকে দেরিতে হলেও স্বীকৃতি দেয়া বলছেন। গাজা শান্তি শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপস্থিতি মুসলিম বিশ্বে দেশটির কেন্দ্র মঞ্চে ফিরে আসার ধারণাকে আরো জোরদার করেছে।

কিন্তু এটি কোনো এক রাতের অলৌকিক ঘটনা নয়। এটি অস্থির অঞ্চলে প্রয়োজনীয়তা, চাপ এবং পরিবর্তিত বিন্যাসের ফসল। দৃশ্যপটের আড়ালে আরো কঠিন বাস্তবতা লুকিয়ে আছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির এই অগ্রগতির প্রথম চালিকাশক্তি হলো আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার। ওয়াশিংটনের আকস্মিক প্রস্থানে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণের জন্য তারা এখনো লড়ছে। একটি বৈরী ইরান এবং সুপ্রতিষ্ঠিত তালেবানের উপস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে একটি প্রতিভার দরকার। পাকিস্তান, তার ভৌগোলিক অবস্থান, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং আফগান বিষয়ে দীর্ঘকাল জড়িয়ে থাকার কারণে, হঠাৎ করেই আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তালেবানের কাছে বাগরাম বিমানঘাঁটি হস্তান্তরের দাবি, মার্কিন প্রত্যাহারের পথ প্রশস্তকারী চুক্তির স্বাক্ষরের পাঁচ বছর পর, আমেরিকাকে তার প্রভাব বলয়ের জন্য মরিয়া অনুসন্ধানকেই তুলে ধরে। যদি সেই কৌশল ব্যর্থ হয়, তবে পাকিস্তানই স্পষ্ট বিকল্প হয়ে ওঠে- ওয়াশিংটনকে এই অঞ্চলে উপস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য লজিস্টিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক সংযোগ উভয়ই রয়েছে এমন একমাত্র রাষ্ট্র।

দ্বিতীয় কারণটি হলো অস্বস্তিকর মার্কিন-ভারত সম্পর্ক। গত দশকে, ওয়াশিংটন ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে আরো গভীরভাবে টেনে এনেছে, যা বৈশ্বিক মঞ্চে তাদের অবস্থান এমনভাবে শক্তিশালী করেছে যা পাকিস্তান হুমকি হিসেবে দেখে। তবুও, মার্কিন-ভারত ঘর্ষণ বেড়েছে। ভিসা এবং শুল্ক নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। মস্কোর প্রতি ভারতের সখ্য ওয়াশিংটনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগস্টে বেইজিং সফর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে ভারত চীনের সঙ্গেও নিজের বাজি ধরে রাখতে প্রস্তুত। অর্থনৈতিকভাবে, তার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি, যা পূর্ব এশিয়ার কম খরচে রপ্তানি কৌশলের আদলে তৈরি, মার্কিন উৎপাদন শিল্পকে দুর্বল করতে পারে। এশিয়ায় ভারসাম্য বজায় রাখতে আগ্রহী ট্রাম্পের কাছে, ভারতের বেইজিংয়ের প্রতি আগ্রহের একটি প্রতিভার হিসেবে পাকিস্তান আবারো কার্যকর বলে মনে হচ্ছে।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চালক হলো খনিজ ক‚টনীতি। ইসলামাবাদ তার ওয়াশিংটন-সম্পর্ককে বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলোতে প্রবেশের প্রতিশ্রুতির ওপর কেন্দ্রীভ‚ত করেছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই বিক্ষুব্ধ বেলুচিস্তান অঞ্চলে অবস্থিত। কাগজে-কলমে, এটি একটি জয়-জয় পরিস্থিতি- পাকিস্তান বিনিয়োগ লাভ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সুরক্ষিত করবে। কিন্তু বাস্তবতা আরো অন্ধকার। কয়েক দশকের উত্তোলন সত্ত্বেও বেলুচিস্তান পাকিস্তানের দরিদ্রতম প্রদেশ রয়ে গেছে। অবকাঠামো প্রকল্পগুলো অব্যবহৃত, বিমানবন্দরগুলো খালি পড়ে আছে এবং বেকারত্বের হার উচ্চ।

মার্চ মাসে প্রাদেশিক আইনসভা কর্তৃক পাস করা বেলুচিস্তান মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস অ্যাক্ট ২০২৫ কেবল অসন্তোষকেই বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আইনের অধীনে, ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তানে খনি-নীতি এবং লাইসেন্সিং সিদ্ধান্তগুলো সুপারিশ করার ক্ষমতা পেয়েছে, যা রাজনৈতিক বর্ণালির সর্বত্র বিরোধিতার জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এটি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনকে দুর্বল করে এবং ইসলামাবাদে নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্রীভ‚ত করে। এমনকি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে খুব কমই সংযুক্ত ডানপন্থি ধর্মীয় দলগুলোও, যেমন জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম, বিরোধিতা প্রকাশ করেছে, এই আইনটিকে স্থানীয় সম্প্রদায়কে প্রদেশের সম্পদের ওপর তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আরো একটি প্রচেষ্টা হিসেবে চিত্রিত করেছে।

এই তীব্র প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক প্রবণতাকে তুলে ধরে। স্থানীয় অংশগ্রহণ ছাড়াই সম্পদ শোষণ ক্ষোভ ও বিদ্রোহকে উস্কে দেয়। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য খনিজ সম্পদ উন্মুক্ত করার মাধ্যমে, ইসলামাবাদ সংঘাত ও সামরিকীকরণে জর্জরিত একটি প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাকে আরো গভীর করার ঝুঁকি নিচ্ছে। ইসলামাবাদে যা মুক্তি বলে মনে হয়, কোয়েটাতে তা বঞ্চনা হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে।

এই চালকগুলো সম্মিলিতভাবে দেখায় যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন একটি পুনর্জন্মের চেয়ে চাপের মুখে একটি হিসেব করা কৌশলগত পরিবর্তন। আফগান শূন্যতা, মার্কিন-ভারত সম্পর্কের নতুন সমন্বয় এবং খনিজ ক‚টনীতির লোভ- এই সবই ইসলামাবাদের নতুন গুরুত্বের ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু এর কোনোটিই অন্তর্নিহিত ভঙ্গুরতাগুলো দূর করে না। ওয়াশিংটন তার অগ্রাধিকার পরিবর্তন হলে আবারো পাকিস্তানকে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়ার মতো মনে করতে পারে। মার্কিন কৌশলে ভারতের গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে না। আর সম্পদ চুক্তিগুলো যদি কেবল শোষণমূলক এবং বর্জনকারী থাকে, তবে বেলুচিস্তানের ক্ষোভ কেবল আরো গভীর হবে।

রিয়াদের সাধুবাদ, গাজা শীর্ষ সম্মেলনে দৃশ্যমানতা এবং ওয়াশিংটনে বিনয়ী করমর্দনকে একটি কৌশলগত পুনর্জন্ম বলে ভুল করা উচিত নয়। পাকিস্তান সাবধানে কৌশলগত চাল দিচ্ছে, চাপের মুখে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে এবং দুর্বলতাগুলোকে সুযোগে পরিণত করার চেষ্টা করছে। তবে আসল পরীক্ষাটি দেশের ভেতরেই। ইসলামাবাদ যদি শাসন-সংক্রান্ত ব্যর্থতা, আঞ্চলিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অবিশ্বাস মোকাবিলা করতে না পারে, তবে পররাষ্ট্রনীতির অর্জনগুলো ভঙ্গুর থেকে যাবে।

শেষ পর্যন্ত, কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা খনিজ চুক্তিই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একটি স্থিতিশীল সামাজিক চুক্তির বিকল্প হতে পারে না। সেই সত্যিকারের পুনর্জন্মের জন্যই পাকিস্তান এখনো অপেক্ষা করছে।

সূত্র : আল-জাজিরা অবলম্বনে বিপ্লব বণিক

লেখক:  ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ারের শিক্ষাবিদ

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

মেডিকেল ট্যুরিজমে চমক এনেছে সুহা ট্রাভেলস থাইল্যান্ড

মেডিকেল ট্যুরিজমে চমক এনেছে সুহা ট্রাভেলস থাইল্যান্ড

সিংগাইরে মাদ্রাসায় বসার বেঞ্চ-টুল উপহার দিলো জেসিআই মানিকগঞ্জ

সিংগাইরে মাদ্রাসায় বসার বেঞ্চ-টুল উপহার দিলো জেসিআই মানিকগঞ্জ

স্বাধীনতার এক নির্মম পরিহাস

স্বাধীনতার এক নির্মম পরিহাস

ড. ইউনূস হতে পারেন জাতিসংঘের মহাসচিব!

ড. ইউনূস হতে পারেন জাতিসংঘের মহাসচিব!

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App