যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে আকাশপথে চরম বিশৃঙ্খলা, বাতিল ১,৪০০ ফ্লাইট
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থা বা শাটডাউন-এর প্রভাবে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আকাশপথে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) একদিনেই বাতিল হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৪০০ ফ্লাইট এবং আরো কয়েক হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকদের ক্লান্তি ও কর্মীসংকটের কারণে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সরকারি অচলাবস্থার দ্বিতীয় দিনে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে ১,৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল এবং প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। শুক্রবার বিলম্বিত ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের বেশি।
এর আগে, সপ্তাহের শুরুতে এফএএ জানিয়েছিল, বেতন ছাড়াই কাজ করা বিমান নিয়ন্ত্রকদের ক্লান্তি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ত ৪০টি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে।
গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই শাটডাউন শনিবার (৮ নভেম্বর) পর্যন্ত টানা ৩৯ দিনে গড়িয়েছে, যা মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থার রেকর্ড ছুঁয়েছে। অর্থায়ন ইস্যুতে কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের অচলাবস্থার কারণে সরকারি অনেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে, সরকার পুনরায় চালুর জন্য সমঝোতা খুঁজতে সিনেটররা সপ্তাহান্তেও আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে বিমান চলাচল পর্যন্ত শাটডাউনের প্রভাব সাধারণ আমেরিকানদের জীবনেও পড়তে শুরু করেছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইনস ওয়াশিংটনের নেতাদের উদ্দেশে জানায়, এই অচলাবস্থা অবিলম্বে শেষ করতে সমাধানে পৌঁছান।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানায়, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি দেখা গেছে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে, যেখানে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ফ্লাইটগুলো গড়ে চার ঘণ্টারও বেশি দেরিতে পৌঁছেছে এবং ছাড়তেও দেরি হয়েছে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে শার্লট/ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং শিকাগো ও’হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। এছাড়া জন এফ. কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল, হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ও লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট ছাড়তে গড়ে এক থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে।
পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী ডাফি এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোয় ব্যক্তিগত জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ওপর চাপ কমে।
এফএএ জানিয়েছে, ফ্লাইট বাতিলের এই হার আগামী সপ্তাহে আরও বাড়বে। শুক্রবার ৪ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পর ১১ নভেম্বর তা হবে ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ বেতন ছাড়া কাজ করায় বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি, অনুপস্থিতি এবং মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা জীবিকা নির্বাহে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া, ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এজেন্সি (টিএসএ)-এর ৬৪ হাজার কর্মীর বেশিরভাগই বেতন পাচ্ছেন না, যা বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার শাটডাউনের সময়ও টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ বেতন না পেয়ে কাজে যোগ দেননি।
