ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে ফায়দা লুটেছে চীন

কামরুজ্জামান আরিফ
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘর্ষ শেষ হয়েছে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। দুই দেশই দাবি করেছে, তারাই জয়ী হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষের এই সংঘর্ষে আলোচনার বাইরে থেকে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প খাতেরও বড় জয় হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের এই উত্তেজনার মধ্যে চীন তাদের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের অস্ত্রের বাজারমূল্যকে আরো একধাপ বাড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু, সেটা কীভাবে…?
সম্প্রতি পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর দায় পাকিস্তানকে দিয়ে বাগ্বিতণ্ডার মধ্যে দেশটিতে হামলা শুরু করে ভারত। তারা এ অভিযানের নামকরণ করে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এরপর উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা-পাল্টা হামলা চালায়। সংঘর্ষে ব্যবহার করা হয় ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান। ফ্রান্স ও রাশিয়ার তৈরি জেট ভারত ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বেইজিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি তাদের জে-১০ ও জে-১৭ বিমান ব্যবহার করে।
ভারত ও পাকিস্তান দুপক্ষই জানিয়েছে, তাদের বিমান সীমান্ত অতিক্রম করেনি এবং দূর থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরই মাঝে ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা কমপক্ষে ছয়টি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্স-নির্মিত রাফালে যুদ্ধবিমানও রয়েছে। পাকিস্তানের এই দাবির বিষয়ে ভারত কোনো জবাব দেয়নি। এদিকে, ভারতীয় যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করতে পাকিস্তান এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ছুড়তে সম্ভবত চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছে।
সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষে চীনা অস্ত্র ব্যবস্থার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে পাকিস্তানের এই ‘জয়ের’ দাবিকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা শিল্পের ব্যাপক উন্নতি বলে মনে করছেন। কেউ কেউ আবার একে চীনা অস্ত্রশিল্পের জন্য ‘ডিপসিক মোমেন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কর্নেল ঝাও বো বিবিসিকে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক আকাশযুদ্ধ চীনা অস্ত্রশিল্পের জন্য এক বড়সড় বিজ্ঞাপন ছিল। অন্যদিকে, বেইজিংভিত্তিক এই বিশ্লেষক জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে আকাশের লড়াই দেখিয়ে দিয়েছে যে, চীনের এমন কিছু ব্যবস্থা আছে, যেমনটা অন্য কারো নেই।
এদিকে, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর জে-১০-এর মতো যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী চীনের অ্যাভিক চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।
কিন্তু বেইজিং জে-১০ ব্যবহার করে রাফাল-সহ ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার খবর নিয়েও কোনো মন্তব্য না করলেও চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক উল্লাস শুরু হয়েছে। চীনের কাছে পাকিস্তান কৌশলগত ও অর্থনৈতিক মিত্র। পাকিস্তান দুর্বল হয়ে পড়লে তা চীনের স্বার্থের জন্য ভালো নয়।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে চীন একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আধুনিক যুদ্ধ ইস্যুতে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা যে কতটা গভীর, সেটি তারা সম্ভবত কল্পনাও করেনি।