বোমা ফাটিয়ে মার্কিন প্রশাসন ত্যাগ মাস্কের, বিদায় ঘণ্টা ট্রাম্পের!

দুরুল হক
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন ইলন মাস্ক। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে প্রতিদানও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আরোহন করেই শুধু মাস্কের জন্য নতুন সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর বা ডিওজিই খোলেন তিনি। মাস্ককে সেই দপ্তরের মূল দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। কিন্তু ৫ মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলকে চমকে দিয়ে ভেঙে গেলো তাদের বন্ধুত্ব।
আচমকা ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে বিদায় নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। ডিওজিই’র কাজ ছিল মার্কিন সরকারের ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কাটছাঁট এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা। অর্থাৎ মাস্কের কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানো। কিন্তু ট্রাম্পের একের পর এক উচ্চাভিলাষী বিল এবং ভুল সিদ্ধান্তে ব্যয় বেড়েছে, কমেছে আয়। এতে বিপদে পড়েছে আমেরিকা।
আগামী ৫ বছরে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা চরমে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাস্কের কোনো কথায় শোনেননি ট্রাম্প। নিজে যা ইচ্ছা তাই করেছেন। অযথা মিত্রসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন। যার ফায়দা লুটছে চীন। সবার সঙ্গে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দেশটির। এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক খাতে। সেখানে খরচ কমেছে। ফলে সার্বভৌমত্ব নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, ট্রাম্পের ত্রুটিপূর্ণ বাণিজ্যনীতিতে মাস্কের ব্যবসায় মন্দা নেমেছে। চীন ও ভারতের বাজার হারাতে বসেছে টেসলা। সবমিলিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ইগোর লড়াই ও সংঘাত শুরু হয়েছিল মাস্কের। এরই মধ্যে ট্রাম্পকে আর সহায়তা না করার কথা জানান তিনি। তার মন্ত্রিসভাতে না থাকার ঘোষণাও দেন।
তবে নেপথ্য কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, নিজের ব্যবসায় মনযোগী হতে চান মাস্ক। টেসলা ও স্পেসএক্সের কাজ দেখতে চান তিনি। তাই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে মাস্কের। ফলে মার্কিন প্রশাসন ছেড়েছেন তিনি। যার প্রমাণও মিলেছে। সম্প্রতি জলকল্যাণমূলক একটি বিলে সই করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেন মাস্ক। তিনি বলেন, এতদিন ডিওজিই’র সদস্যরা যে পরিশ্রম করেছেন, এই বিলের কারণে সেগুলো বৃথা যাবে। কারণ, এই বিলের বাস্তবায়ন খরচ অনেক।
ওই বিলকে ‘বড়’ ও ‘সুন্দর’ বলে ব্যাখ্যা করেন ট্রাম্প। তবে তাতে আপত্তি জানান মাস্ক। তিনি বলেন, একটা বিল একইসঙ্গে বড় ও সুন্দর হতে পারে না। মাস্ক মনে করেন, ট্রাম্পের ভুল সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। যেজন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। ফলে কয়েক দফা ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ করেছেন মার্কিনিরা। সবাই তাকে থামতে বলেছেন।
পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন মাস্ক। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণেই সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনটা হতে থাকলে যেকোনো সময় বিদায় ঘণ্টা বেজে যেতে পারে ট্রাম্পের। ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বন্ধু ও বিনিয়োগকারীরা পাশে না থাকলে বড় বিপদে পড়বেন তিনি।