জয়ের সিআরআই ও পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের নথি তলব, এনবিআরে চিঠি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে যুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও দান সংক্রান্ত সব নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়েছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান দলের দাবি, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও সূচনা ফাউন্ডেশন নামে এই দুই প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও দানের অর্থ গ্রহণে নানা অনিয়ম ও কর মওকুফের সুযোগ নিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৩ জুলাই) দুদক থেকে এ সংক্রান্ত নথিপত্র আগামী ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশন মূলত অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজের কথা বললেও এটি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সিআরআই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের ক্ষতিসাধন করেছে, এমন অভিযোগও উঠেছে।
আরো পড়ুন : পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে ২০১৬ ও ২০২৩ সালে জারি করা কর মওকুফের প্রজ্ঞাপন ও নোটশিটসহ বিস্তারিত নথি তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব নথি যেসব কর্মকর্তা সংরক্ষণ করছেন তাদের নাম-ঠিকানা, পদবি ও দায়িত্ব বণ্টনের তালিকাও চাওয়া হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম এই তদন্ত করছে। টিমের বাকি সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসে অভিযান চালায় দুদক। সে সময় অফিসের কোনো অস্তিত্বই তারা খুঁজে পায়নি বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের সন্দেহভাজন লেনদেনেরও তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া গত ২০ মার্চ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করে দুদক। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ২০টি ব্যাংককে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে সিএসআর তহবিল থেকে এই অর্থ দিতে বাধ্য করা হয়। অনুদানের এই টাকা কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব দুদক এখনও পায়নি।
একইদিন আরেকটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ্যতা দেখাতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভুয়া পরিচয়পত্র দাখিল করেছিলেন। অভিযোগে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মিথ্যা তথ্য জীবন বৃত্তান্তে দেখানো হয়েছিল।
অন্যদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন সিআরআই নিয়েও অনুসন্ধান চলছে। দুদকের অভিযোগ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহার করে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটানো হচ্ছে। এনবিআরের দেওয়া কর অব্যাহতি সুবিধার মাধ্যমে কী পরিমাণ অনুদান বা দান এসেছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখছে অনুসন্ধান দল।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, তদন্তের স্বার্থে যেকোনো সংস্থার নথি তলব করা দুদকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান টিম নিয়মিতভাবে এসব নথি যাচাই করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সূচনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। অটিজম, স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা ও সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এর যাত্রা হলেও সাম্প্রতিক নানা অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি এখন তদন্তের মুখে।