ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ: চাকরি হারালেন তৃতীয় লিঙ্গের কর্মী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। ছবি: ভোরের কাগজ
ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্য, মানসিক নির্যাতন এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ এনেছেন একজন তৃতীয় লিঙ্গের কর্মী। সঞ্জীবনী সুধা (জাতীয় পরিচয়পত্রে আশিকুল ইসলাম) নামে ওই নারী অভিযোগ করেছেন, প্রায় চার বছর ব্র্যাক ব্যাংকে কর্মরত থাকার পরও তাকে কোনো কারণ ছাড়াই টার্মিনেশন লেটার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট কিছুই না দিয়ে তাকে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে। তার অভিযোগের তীর ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইকরাম কবীর এবং শফিকুর রহমান ভূঁইয়ার দিকে।
সঞ্জীবনী সুধা জানান, তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের কমিউনিকেশন অ্যান্ড সিএসআর অফিসার হিসেবে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর যোগদান করেন। চাকরির শুরু থেকেই তাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তার অভিযোগ, বস ইকরাম কবীর এবং শফিকুর রহমান ভূঁইয়া তাকে ভিন্ন লিঙ্গের হওয়ায় মানসিক নির্যাতন করতেন। পড়াশোনা, শাড়ী পরা, মেকআপ, গেটআপ, গায়ের রং এমনকি লিঙ্গ পরিচয় নিয়েও তাকে প্রতিনিয়ত কটূক্তি শুনতে হয়েছে। চাকরি ছাড়ার শেষ ছয় মাস তার লাইন ম্যানেজার শফিকুর রহমান ভূঁইয়া তার সঙ্গে কথাই বলতেন না, যা তাকে মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত করে তোলে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, তাকে কাজ শেখানো হয়নি এবং বিভিন্ন সময় কর্মক্ষেত্রে তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তার বসরা তাকে কোনো কাজ করতে দিতেন না এবং তার অনুপস্থিতিতে তারাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন। সঞ্জীবনী সুধার দাবি, তাকে এমনভাবে মানসিক চাপ দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি নিজেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
ব্র্যাক ব্যাংকের অভ্যন্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বলে জানান সঞ্জীবনী। হেড অব এইচআর-এর কাছে তিনবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল মেলেনি। তাকে জানানো হয়েছে যে ভিন্ন লিঙ্গের হওয়ায় তার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম আছে, কিন্তু সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ব্র্যাকের সেফগার্ডিং ও ব্র্যাক ব্যাংকের সেফগার্ডিং কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল, কিন্তু উল্টো তাকেই দোষারোপ করা হয়।
ব্র্যাকের বর্তমান প্রধান আসিফ সালেহকে তিনবার ইমেইল করেও কোনো সমাধান মেলেনি বলে তিনি দাবি করেছেন। তার সংগঠন 'ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ'-এর পক্ষ থেকেও আসিফ সালেহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয় উল্লেখ করে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়।
সঞ্জীবনী সুধার অভিযোগ, ব্র্যাক ব্যাংক তাকে ব্যবহার করে সরকারের কাছ থেকে কর মওকুফ পেয়েছে এবং বিদেশি অতিথিদের সামনে তাকে প্রদর্শন করে 'ইনক্লুসিভিটি'র প্রমাণ দিয়েছে, অথচ কর্মক্ষেত্রে তার প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, টার্মিনেশন লেটারে 'কর্মক্ষেত্রে অনীহা' নামক যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ হাস্যকর ও অযৌক্তিক। দিনের পর দিন মানসিক অত্যাচার করে, তাকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এখন উল্টো তাকেই দোষারোপ করা হচ্ছে।
সঞ্জীবনী সুধা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এবং সমাজের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি শুধুমাত্র সম্মানের সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যার জন্য তাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হলো। তিনি তার টার্মিনেশন লেটার এবং তার সংগঠনের সঙ্গে ব্র্যাকের আলোচনার কিছু নথি প্রকাশ করেছেন, যা তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করে। তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ করেছেন, যখন ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকার বিষয়ে বক্তব্য দিতে শোনা যাবে, তখন তার এই উদাহরণ টেনে যেন তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়।
