×

বিএনপি

তারেক রহমান

অনির্বাচিত সরকারের বন্দর বা এলডিসি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম

অনির্বাচিত সরকারের বন্দর বা এলডিসি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

অনির্বাচিত সরকারের বন্দর ও এলডিসি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এমন সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর নিয়ে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে প্রকাশিত ওই দীর্ঘ পোস্টে তারেক রহমান দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার প্রতিক্রিয়াটি শুরু করেন এভাবে– ‘গাজীপুরের ছোট একটি পোশাক কারখানার মালিকের গল্প এটা। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কয়েকশ শ্রমিক রয়েছে। সীমিত আয়ে চলছে কারখানাটি। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে নির্মম বিশ্ববাজারের সঙ্গে। একদিন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য যেসব শুল্ক সুবিধা একসময় তিনি পেতেন, তা নীরবে উঠে যায়। এর ফলে তার ক্রয়াদেশ ক্রমেই কমে যায়। বিপরীতে কারখানা খোলা রাখা, কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য চাপ বেড়ে যায়।’

‘এখন নারায়ণগঞ্জের একজন তরুণ স্নাতকের দিকে দেখি। তিনি তার পরিবারকে চরম অনিশ্চয়তায় ডুবতে দেখেছেন। তার বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন। পরিবার চালাতে ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করতে হয়। যখন রপ্তানির চাপ কমতে থাকে, শুরুতে ওভারটাইম উঠে যায়। এরপর শিফটে কাটছাঁট করা হয়। শেষে ছাঁটাই। এসব গল্প সংবাদের শিরোনাম হয় না। এগুলো সাধারণ ঘরের ভেতরকার নীরব সংকট।’

তারেক রহমান লেখেন, ‘যে সিদ্ধান্তের কারণে তাদের এমন দশা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তারা ভোট দেননি। এমনকি তাদের কখনো জিজ্ঞেসও করা হয়নি। তাদের কখনো আসল সংখ্যাটাও দেখানো হয়নি। এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আমরা যেমনটা দেখেছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তা-ই দেখছি। সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সমালোচনাকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুততা ও অনিবার্যতার অজুহাত দেখিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারি বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক যতটা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এটা তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লেখেন, ‘বিএনপি আগেও বলেছে, সময় নেওয়ার বিকল্পের পথে না গিয়ে ২০২৬ সালে উত্তরণের সময়সূচি এগিয়ে নেওয়া পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অথচ তা নিচ্ছে এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। তারপরও তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে বহু দশক ধরে প্রভাবিত করবে।’

‘আমাদের বলা হয়েছে, দেরি করাটা অসম্ভব। এমনকি এটা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করাটাও অপমানজনক হবে। জাতিসংঘ বিবেচনা করবে না। কিন্তু আমরা সবাই যদি নিবিড়ভাবে দেখি– দেখব, ইতিহাস আরও জটিল গল্প বলছে। অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশগুলোর জন্য উত্তরণের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান লেখেন, জাতিসংঘের নিয়মও বলছে– কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে ধাক্কা খেলে সময়সীমা নিয়ে নমনীয়তা দেখানো যায়। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে বাড়তি সময় চাওয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। তাহলে আমরা কেন বিকল্প না থাকার ভান করছি? কেন আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সংকুচিত করছি?

‘আসলে বিকল্পটি প্রকাশ্যে বাতিল করে আমরা আমাদের নিজস্ব আলোচনার সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার টেবিলে বসার আগেই আমরা আমাদের অবস্থান প্রকাশ করে দিচ্ছি। এতে দর-কষাকষির শক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।’

বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘সরকারি নথিপত্রে বলা হয়েছে– দেশের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে ব্যাংকিং খাতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা, ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, রপ্তানি শ্লথ হয়ে আসার চাপ মোকাবিলা করছেন। এটা উত্তরণবিরোধী কোনো যুক্তি নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু উত্তরণে ‘যোগ্য’ হওয়া আর ‘প্রস্তুত’ হওয়া এক জিনিস নয়। আমি মনে করি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত জাতীয় শক্তিমত্তা নিয়ে সংশয়ে ভোগা উচিত নয়। আসল জাতীয় শক্তি হলো মূল্য অপরিবর্তনীয় হয়ে ওঠার আগেই কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার শৃঙ্খলা থাকা।’

ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, ‘এবার আসি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে। সেখানে যা ঘটে, সেটা লাখ লাখ মানুষের জীবনে রাজনৈতিক বোলচালের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলে। বন্দরের বিষয়ে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো নিয়মিত কাজের (রুটিন ওয়ার্ক) অংশ নয়। এগুলো একটি জাতীয় সম্পদ নিয়ে কৌশলগত প্রতিশ্রুতি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে ফেলার এসব সিদ্ধান্ত এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।’

‘এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আমরা যেমনটা দেখেছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তা-ই দেখছি। সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সমালোচনাকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুততা ও অনিবার্যতার অজুহাত দেখিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার– এটা কারো প্রতি ব্যক্তিগত সমালোচনা নয় কিংবা কাউকে আক্রমণ করার বিষয়ও নয়। বিষয়টা হলো– প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়া। সেসব নীতি রক্ষা করা, যা দেশের ভবিষ্যৎ কয়েক দশকের জন্য নির্ধারণ করে দেয়। এসব সিদ্ধান্ত সেই সরকারের নেওয়া উচিত, জনগণের কাছে যাদের জবাবদিহি রয়েছে।’

তারেক রহমান লেখেন, ‘কেউ বলছে না যে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে না কিংবা বন্দর সংস্কার করা উচিত নয়। যুক্তিটা আরও সহজ ও মৌলিক। একটি দেশ যে সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কৌশলগত ধৈর্য কখনোই দুর্বলতা নয়। জনগণের মতামত কোনো বাধা নয়। গণতান্ত্রিক বৈধতা মানে বিলম্ব নয়। আমার মতে, হয়ত এটাই এ পুরো আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য।’

বাংলাদেশের মানুষ কখনো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব থাকেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সবসময় নিজেদের মর্যাদা রক্ষা, মতপ্রকাশ আর পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশের মানুষের চাওয়াটা সহজ– তাদের কথা শোনা হোক, তারা অংশ নিতে পারুক এবং তাদের সম্মান জানানো হোক। এ কারণেই আমাদের অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দেশের মানুষের কথা বলার, বেছে নেওয়ার এবং একটি সহজ সত্য নতুন করে প্রমাণ করার সুযোগ এটা। আর সত্যটি হলো– এ দেশের ভবিষ্যৎ তাদের দ্বারাই গঠিত হবে, যারা এখানে বসবাস করেন এবং বিশ্বাস করেন সবার আগে বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

তদন্তে বাধা দিলে তালিকা প্রকাশ করা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

তদন্তে বাধা দিলে তালিকা প্রকাশ করা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

ফের বাড়লো স্বর্ণের দাম

ফের বাড়লো স্বর্ণের দাম

শার্ম এল শেইখ: নীল সমুদ্র, সোনালি মরু আর এক নীরব স্বর্গের সন্ধান

শার্ম এল শেইখ: নীল সমুদ্র, সোনালি মরু আর এক নীরব স্বর্গের সন্ধান

পরিবার থেকে রাজনীতি: বাংলাদেশের সামাজিক ও নৈতিক চিত্র

পরিবার থেকে রাজনীতি: বাংলাদেশের সামাজিক ও নৈতিক চিত্র

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App