ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথগুলোয় কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ জারি রাখা হয়েছে।

সোমবার রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ বিশেষ নিয়ন্ত্রণ চলবে টানা ৩৪ ঘণ্টা, যা বলবৎ থাকবে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাবির প্রধান প্রধান প্রবেশপথ ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত, পলাশী, ফুলার রোডসহ প্রতিটি প্রবেশপথেই কড়া অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

আরো পড়ুন : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

বহিরাগত কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে শুরুতেই তাকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া হচ্ছে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী কিংবা অনুমোদিত কেউ কি না। বৈধ আইডি ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সংশ্লিষ্ট পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে।

সকাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী হাতে পরিচয়পত্র নিয়ে গেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করছেন। বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ বা বাইরের কেউ ঢুকতে চাইলে ফিরিয়ে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করা প্রতিটি যানবাহনেও চলছে তল্লাশি। কেবল স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়িগুলোই প্রবেশ করতে পারছে।

গেটে দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য জানান, আজ ডাকসু নির্বাচন। এজন্য ক্যাম্পাসের ভেতরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্দেশনা আছে—আইডি ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

প্রবেশপথে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ভেতরে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছেন। ক্যাম্পাসে পোস্টার, ব্যানার ও প্রচারসামগ্রী চোখে পড়লেও এখন মূলত ভোটকেন্দ্রকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়েই ব্যস্ত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ঢাবির সব প্রবেশপথ—শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, পলাশী, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত—সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই প্রবেশ করতে পারবেন। পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে।

এ ছাড়া কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন—অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিস—ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।

ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী। নারী প্রার্থীদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে একজন এবং এজিএস পদে ৪ জন রয়েছেন।

মোট ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে একযোগে চলছে ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।