বাগেরহাটের বাগদা চিংড়ি সাদা সোনার খ্যাতি পেলো কেন?

বাসস
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম

সাদা সোনাখ্যাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট দ্বিতীয়। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাদদেশে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে বাগেরহাটের অবস্থান। দেশে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে এ জেলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এখানে তা উৎপাদনের হার ২৭ শতাংশ।
লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন বেশি উপযোগী হলেও আধুনিক প্রযুক্তির সমাহার ঘটিয়ে এখন এটি মিষ্টি পানিতেও উৎপাদন হচ্ছে। যেটি এই এলাকার মানুষের জন্য অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত করেছে। আর দিনে দিনে কৃষি জমিতে ক্রমশ তা চাষের হার বেড়ে চলেছে। পতিত জমিতে এখন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক লিজ নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
এটি বিশ্বে সুস্বাদু হিসেবে অধিক পরিচিতি লাভ করেছে। বাগদার উল্লেখযোগ্য ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমুহ বিশেষ করে ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ আরব বিশ্ব। ভারত, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও তা নিয়ে থাকে। দেশে যেকোনো উৎসবে বাগদা চিংড়ি খাবার মেন্যুতে থাকতে হবে এটি এখন নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩--২০২৪ অর্থবছরে বাগেরহাটে ৫,৫১১৫৯.২৭ হেক্টর জমিতে ৪৬,৩১৩টি ঘেরে বাগদার উৎপাদনের মোট পরিমাণ ২০,৯৪০.৩০ মেট্রিক টন, যা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রির পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা।
উপজেলা ভিত্তিক সদর উপজেলায় ৭৬৭৩ হেক্টর জমিতে ৪৪৮০টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৬৮৯৯ মেট্রিক টন। কচুয়া উপজেলায় ১৩৩৩.৫ হেক্টর জমিতে ২৮৫৬টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ৭৫৭ মেট্রিক টন। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১২৮০০ হেক্টর জমিতে ৮৭৫০টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ৭৪২৪ মেট্রিক টন।
চিতলমারী উপজেলায় ৯৬৯.৭৭ হেক্টর জমিতে ২৪৯৩টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১৪৫৩.০০ মেট্রিক টন। ফকিরহাট উপজেলায় ১০৬১ হেক্টর জমিতে ২৩২৪টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১৫৯৫.৬ মেট্রিক টন। মোল্লাহাট উপজেলায় ৫১৩ হেক্টর জমিতে ১৮১৪টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১১৮৭ মেট্রিক টন। রামপাল উপজেলায় ১৩১২৯ হেক্টর জমিতে ১৭৪৫০টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১১২০১ মেট্রিক টন। মোংলা উপজেলায় ১৩৬১১ হেক্টর জমিতে ৬০৭০টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১১৪৬৭ মেট্রিক টন। শরনখোলা উপজেলায় ৫১ হেক্টর জমিতে ৭৬টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ২৩ মেট্রিক টন।
কচুয়া মৎস্য অফিসের মাঠ পর্যায়ের ক্ষেত্র সহকারী সুমনা সাহা জানান, ১ একর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষে খরচ হয় ১ লাখ টাকা, যা বিক্রি হয় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। চাষির লাভ হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
কচুয়া উপজেলা মৎস্য অফিসের মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা দীপংকর কুমার চক্রবর্তী জানান, বাগদা চাষের ক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করে জীবাণুমুক্ত পোনা ঘেরে ছাড়লে ভাইরাসের আক্রমণ হয় না। বাগদার রেনু ৩০ থেকে ৪৫ দিন নার্সিং করলে ডেথ রেট কমানো সম্ভব। চাষের ঘেরের গভীরতা ৩.৫- ৫ ফুট রাখলে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। সাধারণত ৫-২৫ পিপিটি মাত্রার লবণ পানিতে বাগদা চাষ করা যেতে পারে। কিন্তু যদি পানির লবণাক্ততা ১২পিপিটি হয়; তাহলে বাগদার বৃদ্ধি সবচেয়ে ভালো হয়। ৯০-১২০ দিনের মধ্যে মাছ বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশ। দেশে বাগদা উৎপাদনে বাগেরহাট দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এই চিংড়ি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। তাই বাগদা সাদা সোনার খ্যাতি পেয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, সমুদ্র উপকুলবর্তী এ জেলা হতে ১৯১১ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং জেলার অন্যতম প্রধান জীবিকা মৎস্য খাত।