বাবা-ভাই না ফেরার দেশে, ঋতুপর্ণার মা লড়ছেন ক্যানসারের সঙ্গে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:২৬ এএম

মায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের অন্যতম প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমার ফুটবল মাঠে পারফরম্যান্স যেমন অনন্য, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবনের সংগ্রামও চোখে পানি আনতে বাধ্য করে। সাফ জয়ের নায়িকা থেকে এখন এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইংয়ের মূল নায়িকা—এই পথচলায় ঋতুপর্ণা কখনো ভেঙে পড়েননি, যদিও বারবার তাঁকে জীবন পরীক্ষায় ফেলেছে।
২০০০ সালের আশেপাশে জন্ম নেওয়া ঋতুপর্ণা যখন ফুটবলে পা রাখেন, তখন তার পাশে ছিলেন বাবা। বাবার অনুপ্রেরণায় মাঠে যাওয়া শুরু করেন তিনি। তবে সময়ের নির্মমতায় আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর ২০২২ সালে ভাই পার্বণ চাকমা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
তার তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। ছোট্ট এই পরিবার এখন দাঁড়িয়ে আছে মা আর ঋতুপর্ণাকে নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানেই থেমে থাকেনি—মা আক্রান্ত হয়েছেন ব্রেস্ট ক্যানসারে।
ঋতুপর্ণা জানান, আমার মা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। আমি নিয়মিত ক্যামোথেরাপি দিচ্ছি। এবার দেশে ফিরে অপারেশন করাবো। আশা করি মা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
২ জুলাই যখন তার জোড়া গোলে বাংলাদেশ চলে গেল এশিয়ান কাপে, তার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করেছেন মাকে। ঋতুপর্ণা জানান, জেতার পর মাকে কল দিয়েছি। তিনি খুব খুশি। বললেন, ‘তোর গোলের কথা শুনে আমার শরীরটা ভালো লাগছে, অসুস্থই মনে হচ্ছে না।’
বাহরাইনের পর মিয়ানমারকেও হারিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়েদের এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে নিয়মরক্ষার ম্যাচ আজ ঋতুপর্ণাদের। ইয়াঙ্গুনের থুউন্নু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ।
টানা দুই জয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে আছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। শুক্রবার কিডস জোনে বেড়াতে গিয়ে ছবি এঁকে সময় কাটিয়েছেন মারিয়া মান্দা, ঋতুপর্ণা চাকমারা। এ অনুভূতিটা কেমন জানালেন ঋতুপর্ণা, ‘অনুভূতি বলে প্রকাশ করতে পারব না। আমরা যখন জানতে পারি, এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি, এটা কল্পনারও বাইরে ছিল। আমরা বহু বছর পর এত কষ্ট করে এশিয়ান কাপে খেলব। এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন।’
তবে দুই জয়ে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করার পরও উদযাপন করেনি বাংলাদেশ দল। সবটুকু উদযাপন তোলা আছে শেষ ম্যাচের জন্য। তা শেষেই উদযাপন করতে চান ঋতুপর্ণারা, ‘আমরা এখনো উদযাপন করিনি। আরেকটা ম্যাচ আছে। তারপর উদযাপন করার পরিকল্পনা আমাদের।’
উদযাপন হয়নি, তাই বলে ভালো লাগার রেশ মনে নেই, ব্যাপারটা এমন নয়। ঋতুপর্ণার কথা, ‘আমরা দুবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন। এবার এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপে খেলার। বাংলাদেশকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। সেটাই আমরা করছি। লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি।’