আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা
সময়মতো চিকিৎসাই স্ট্রোক রোগীর জীবন বাঁচায়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম
ছবি : ভোরের কাগজ
‘এভরি টাইম কাউন্টস’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল চত্বরে বর্ণাঢ্য র্যালি ও ট্রেনিং কমপ্লেক্স গ্যালারীতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২ নভেম্বর) ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. সুজন শরীফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে স্ট্রোক বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করেন ঢামেক হাসপাতালের এন্ডোভাসকুলার ও স্ট্রোক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান শিকদার।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশে ৮৯ শতাংশ স্ট্রোক ঘটে। প্রতি মিনিটে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ (নিউরন) মারা যায়। তাই স্ট্রোকের রোগীদের জন্য সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া গেলে রোগীকে পুরোপুরি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনা গেলে জীবন সুরক্ষা পায়। থেরাপির মাধ্যমে এসব রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব বলেও জানান তিনি।
স্ট্রোক সকল বয়সের মানুষের হতে পারে জানিয়ে ডা. শাহেদুর রহমান বলেন, তবে আশার কথা হলো, এসব রোগীদের চিকিৎসা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে দেশেই হচ্ছে। স্ট্রোক ইউনিট ছাড়া স্ট্রোকের সফল ও কার্যকর চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব হয় না, এ কারণে আরো স্ট্রোক ইউনিট প্রতিষ্ঠার করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এখন রোগীরা বুঝতে পারেনা তাদের স্ট্রোক হয়েছে কিনা, এই সচেতনতা মানুষের মাঝে তৈরি করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগের ক্ষেত্রে টাকা বা ভালো চিকিৎসা নিয়ে হয়তো সুস্থ হওয়া সম্ভব কিন্তু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে হয়তো মৃত্যু হতে পারে বা বরণ করে নিতে হবে পঙ্গুত্বের জীবন। সেজন্য সচেতনতা ও প্রতিরোধ এই রোগের সবচেয়ে বড় সমাধান।
তিনি আরো বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় অনেক রোগী সময়মতো চিকিৎসা পান না। স্বাধীনতার এত বছর পর এসেও স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেকাংশেই ঢাকা কেন্দ্রীক। বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে স্ট্রোকের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি চার জনে একজনের স্ট্রোক হয়, তবে এই স্ট্রোক নব্বই ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে করে আমাদের আর চিকিৎসা পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজনই হলো না।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশে স্ট্রোক সেন্টার হওয়া প্রয়োজন, এবং মানুষের ঘনত্বের ভিত্তিতে সারা দেশকে স্ট্রোক সেন্টারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ বলেন, অসংক্রামক রোগের ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনের আহ্বান জানান।
ঢামেক হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, স্ট্রোকের সকল রোগী, বিশেষ করে বয়স্কদের সার্জারি করা সম্ভব হয় না। সেই সকল রোগীদের ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা স্ট্রোকের চিকিৎসায় হটলাইন চালুর পরামর্শ দেন এবং একই সঙ্গে স্ট্রোক অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করার প্রস্তাব দেন। এছাড়াও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারসহ অন্যান্য অংশীজনদের সক্রিয় ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
সব মিলিয়ে বক্তারা বলেন, সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশে স্ট্রোকজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
