গাজায় সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ৭শ’র বেশি ফিলিস্তিনির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত
গাজার অবরুদ্ধ উপত্যকায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ৮৯১ জন। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত বিতর্কিত সহায়তা প্রকল্প গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নতুন করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) আল জাজিরা-র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, নিহতদের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষ বেঁচে থাকার শেষ আশায় সহায়তা কেন্দ্রে আসছে, আর তখনই তাদের ওপর হামলা হচ্ছে।”
তার ভাষায়, “পরিবারগুলো চরম খাদ্য সংকটে। অনেকে সন্তানদের মুখে তুলে দিতে নিজে না খেয়ে থাকছেন। অনেকেই পুরো দিন না খেয়ে কাটাচ্ছেন।”
জানা গেছে, গত মে মাসের শেষ দিকে চালু হওয়া এই জিএইচএফ প্রকল্পে সহায়তা নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনা ও প্রকল্পের নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, প্রকল্পে যুক্ত কয়েকজন মার্কিন ঠিকাদার নিজের চোখে এমন ঘটনা দেখেছেন বলে জানান।
তবে জিএইচএফ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, “এই ধরনের তথ্য ভিত্তিহীন। আমরা আমাদের সহায়তা কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “জিএইচএফ-ই একমাত্র সংস্থা যারা এখন গাজায় সহায়তা পৌঁছে দিতে পারছে।” জুন মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়।
তবে সহিংসতা আরও বাড়ে যখন শনিবার গাজার খান ইউনুসে জিএইচএফ-এর একটি কেন্দ্রে গ্রেনেড হামলায় দুই মার্কিন কর্মী আহত হন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পকে “অমানবিক ও সামরিকীকৃত” হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির মতে, “এই প্রকল্প মূলত আন্তর্জাতিক উদ্বেগ দূর করার একটি মুখোশ। এটি ইসরায়েলি নিপীড়নের আরেকটি রূপ।”
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অসহায় মানুষ।
এক ফিলিস্তিনি নাগরিক মাজিদ আবু লাবান বলেন, “আমার বাচ্চারা টানা তিন দিন কিছু খায়নি। তাই বাধ্য হয়ে রাতে নেটসারিম করিডোর দিয়ে সহায়তা কেন্দ্রে যাই। কিন্তু হঠাৎ ইসরায়েলি সেনারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে।”