শেখ হাসিনার রায়
ট্রাইব্যুনাল-সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সামনেই মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় এমন কড়া নিরাপত্তা চিত্র দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্টের চারদিক ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনী টহল দিচ্ছে। মাজার গেটের সামনে সেনাবাহিনীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভেতর ও বাইরে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি।
চব্বিশের জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় আজ ঘোষণা করা হবে। ঐতিহাসিক এ রায় সরাসরি দেখতে পারবে বিশ্ববাসী। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পর্দায় এ বিচারপ্রক্রিয়া সরাসরি প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : ট্রাইব্যুনালে পৌঁছালেন সাবেক আইজিপি মামুন
ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রায় শোনার অপেক্ষায় রয়েছে দেশের মানুষসহ বৈশ্বিক মহলও। তাই রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যেন এ বিচার ভবিষ্যতের জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বড় পর্দা বসানোর প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা। গত ২৩ অক্টোবর সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিশ্বব্যাপী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর কয়েকটি যুক্তির জবাব দেন। একইসঙ্গে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় যুক্তিতর্কে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রসিকিউশন। তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। রায় ঘোষণার পরই জানা যাবে সাবেক এ পুলিশপ্রধানের ভাগ্য— খালাস নাকি অন্য কিছু।
এই মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে বীভৎস জুলাই-আগস্টের চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। শেষ সাক্ষী ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর, যার জেরার মধ্য দিয়ে ৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর সম্পন্ন হয় প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক।
তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে, উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের আয়তন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ এবং দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকা। সাক্ষী রাখা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
