জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হচ্ছে আজ।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে।

নির্ধারিত কার্যক্রম অনুযায়ী প্রথমে প্রসিকিউশন যুক্তি উপস্থাপন করবে। এরপর উপস্থিত ও পলাতক আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা তাদের যুক্তি তুলে ধরবেন। সবশেষে উভয় পক্ষের পাল্টা যুক্তি ও খণ্ডন উপস্থাপন করা হবে। এই ধাপ শেষ হলেই মামলাটি রায়ের জন্য প্রস্তুত হবে। চলতি মাসের মধ্যেই উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর এ মামলার আসামি শাহবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন জুয়েল মাহমুদ। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি শহীদ মিনারে অংশ নিয়েছিলেন এবং ওই দিন পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেনের সঙ্গে দেখা হলে সরকার পতনের খবরও তাকে জানান।

আরো পড়ুন : আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

এরপর ৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে নিজের পক্ষে নিজেই সাফাই সাক্ষ্য দেন মো. আরশাদ হোসেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকালে তিনি তার সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চানখারপুল এলাকায় কোনো ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেননি। একই দিনে মো. সোলাইমানও সাফাই সাক্ষ্য দেন। সবমিলিয়ে আরশাদ হোসেনসহ তিনজন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সাফাই সাক্ষ্য ও তাদের জেরা শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, গত ৩০ নভেম্বর আরশাদ হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করে তিনজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দেন। এ আবেদন করা হয়েছিল ২৭ নভেম্বর।

উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ১২ নভেম্বর এবং ১৯ নভেম্বর টানা তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য শেষ হয়। সাক্ষ্যে তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় পরিচালিত তদন্তের বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং জব্দ করা তথ্যপ্রমাণাদি উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার জেরা সম্পন্ন হয়। সবমিলিয়ে ২৩ কার্যদিবসে ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়।

এ মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন—শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম।

পলাতক আসামিরা হলেন—ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

চলতি বছরের ১৪ জুলাই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।