×

মধ্যপ্রাচ্য

তেহরানে এক কোটি মানুষের দুই সপ্তাহ চলার মতো পানি আছে

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম

তেহরানে এক কোটি মানুষের দুই সপ্তাহ চলার মতো পানি আছে

ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে পানি সংকটের প্রতিবাদে এক ব্যক্তির হাতে ধরা বোতলে লেখা 'সতর্কতা: পান করার অযোগ্য পানি'। ছবি : সংগৃহীত

ইরানের রাজধানী তেহরানের প্রধান খাবার পানির উৎস দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম। শহরটির পানি সরবরাহকারী সংস্থার পরিচালক বেহজাদ পারসা বলেছেন, শহরের প্রধান জলাধার আমির কাবির বাঁধে বর্তমানে "মাত্র ১৪ মিলিয়ন ( এক কোটি ৪০ লাখ) ঘনমিটার পানি" রয়েছে। এক বছর আগে সেখানে ৮৬ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ছিল।

পারসা সতর্ক করে বলেন, বর্তমান স্তরে শহরের পানি সরবরাহ মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য যথেষ্ট। তেহরান প্রদেশ দীর্ঘমেয়াদী খরার কবলে, যা অঞ্চলটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পানি সংকটের মুখে ফেলেছে। অক্টোবর মাসে এক স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত এক শতাব্দীর মধ্যে প্রায় নজিরবিহীন।

সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ সতর্ক করেছে, আগামী কয়েক মাসে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে তেহরানে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই পানীয় জলের সরবরাহ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

বাসিন্দারা জানান, পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলো দ্রুত পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে অথবা একেবারেই পানি নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে ইন্টারনেট ও লিফটও বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র গরম এবং বায়ু দূষণের সময়, বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধদের জন্য পরিস্থিতি অসহনীয়।

ইরানজুড়ে পানি সংকট এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনমনে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। রাজধানীর বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে খুজেস্তান ও সিস্তান-বালুচিস্তানের গ্রাম পর্যন্ত জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। টানা পাঁচ বছর শুষ্কতা এবং রেকর্ড তাপের পর, তেহরানের পৌরসভার কলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। জলাধারের পানি স্তর ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

‘ডে জিরো’ পরিস্থিতি

কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছেন, যদি উল্লেখযোগ্যভাবে পানি ব্যবহার হ্রাস না করা হয়, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর কিছু অংশ “ডে জিরো”-র মুখোমুখি হতে পারে। অর্থাৎ বাড়ির পানির কল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে এবং পানি সরবরাহ করা হবে স্ট্যান্ডপাইপ বা ট্যাংকারের মাধ্যমে। হাসপাতাল ও জরুরি সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ধনী পরিবারগুলো ছাদের ওপর পানি সংরক্ষণের ট্যাংক বসাতে পারলেও দরিদ্ররা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।

খরার পেছনের কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি শুধু শুষ্কতার কারণে নয়, বরং ‘পানির দেউলিয়াত্ব’- অত্যাধিক ব্যবহার ও অপচয়ই সংকট তৈরি করেছে। তেহরান ও অন্যান্য শহরে পুরনো ও ভাঙা পাইপলাইনের কারণে পরিশোধিত পানির প্রায় ২২ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে। কৃষি খাতে মোট পানির প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়, যার বেশিরভাগই অদক্ষ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে যায়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট

জলাধার খালি থাকায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। গরমের সময় এয়ার কন্ডিশনিং ও পানির পাম্পের চাহিদা মেটাতে গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র হিমশিম খাচ্ছে। ধনীরা জেনারেটর ব্যবহার করতে পারলেও দরিদ্রদের জন্য বিভ্রাট মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জুলাই মাসে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা নির্ভরযোগ্য সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ৬২ হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে অনেক বেশি। দিন ও রাতের দুই থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন সাধারণ ঘটনা।

সরকারের পদক্ষেপ

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার অন্তত ২০ শতাংশ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার পুনঃব্যবহার, নিয়ন্ত্রিত সেচ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সাত বছরে জাতীয় পানি ব্যবহার বছরে ৪৫ বিলিয়ন ঘনমিটার কমানোর পরিকল্পনা করছে। তবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিনিয়োগের ঘাটতি এ লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করছে।

প্রতিবাদ ও সামাজিক প্রভাব

খুজেস্তান ও সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে, যেখানে পানি সংকট সবচেয়ে তীব্র, সেখানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, পানি, বিদ্যুৎ ও জীবন পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। কূপ ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় পরিবেশগত অভিবাসন বাড়ছে। শহরে বাস্তুচ্যুত মানুষের চাপ বাড়ছে, যা অস্থিরতা তীব্র করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সতর্কবার্তা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেহরানিদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীন হলে উন্নত পানিশোধন ও পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। তেহরান মন্তব্যকে রাজনৈতিক নাটক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ কনভেনশন জানিয়েছে, ইরান দেখাচ্ছে কী ঘটে যখন পানি সংকট, ভূমি অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্বল শাসনব্যবস্থা একত্রিত হয়। বিশ্ব এখন মানবসৃষ্ট খরার যুগে প্রবেশ করেছে, যার ফলে ২০০০ সাল থেকে খরার প্রবণতা ২৯ শতাংশ বেড়েছে।

ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাধান আছে, তবে পানি, জ্বালানি ও ভূমি নীতিতে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, তেহরানে গ্রীষ্মে কল থেকে পানি আসবে কি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আবারও বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

আবারও বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

ডিএমপিতে ৫ রদবদল

ডিএমপিতে ৫ রদবদল

আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েই গুলিতে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন

আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েই গুলিতে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন

তেহরানে এক কোটি মানুষের দুই সপ্তাহ চলার মতো পানি আছে

তেহরানে এক কোটি মানুষের দুই সপ্তাহ চলার মতো পানি আছে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App