জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না : কর্নেল শফিকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, দেশের স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না সেনা সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। দেশের স্বাধীনতা, সাবভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
সোমবার (২৬ মে) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও সমসাময়িক পরিস্থিতি এবং সেনাবাহিনীর দৈনন্দিন আভিযানিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনা সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে-এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদা দেশের জনগণের পাশে থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকবে সেনাবাহিনী। ঈদে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট হতে এই পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এই পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গত ২০ মে ভাষানটেক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চারটি বিদেশি পিস্তল, ২৮ রাউন্ড গুলিসহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিটলু বাবুসহ তার গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে। বিগত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট হতে এই পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪শ’ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন-ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত এক মাসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জেলিমিশ্রিত চিংড়িসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে এরূপ অভিযান স্থানীয় জনগণের মাঝে আস্থা সৃষ্টি করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এই পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকেট কালো বাজারী অথবা অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয় রোধকল্পে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে যা ঈদ-উল-ফিতরের মতোই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
একই সঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়া গত এক মাসে বেইলী রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ টাওয়ার, মতিঝিলের শাহ জালাল ইসলামি ব্যাংক এবং ধামালকোট বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বিতভাবে দ্রুততম সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। যার ফলে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
২০২৪ সালের বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত চারটি জেলায় (কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম) দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের জন্য বিশেষ আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩শ’টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে, যা গত ৩০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক টাকা দিয়েই প্রকল্পটি সুন্দরভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করেছে, যা সবার দ্বারা ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছে। সততার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেশবাসী স্মরণ রাখবে বলে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এপ্রিল ও মে মাসে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ‘এ’ দল বাংলাদেশ সফর করে। সফরকালীন বেশ কিছু ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। ওই সময়ে হোটেলে অবস্থান, হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে গমনাগমন এবং খেলা চলাকালীন বিসিবি, আয়োজক ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে। বৌদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা ২০২৫’ পালনে সারা দেশের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। যার ফলে গত ৫ মে বৌদ্ধ ধর্মানুসারীগণ আনন্দঘন পরিবেশে ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা ২০২৫’ উদযাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনৈতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।