ঋতুরানী বর্ষার প্রথম দিন আজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১০:২২ এএম

আজ পহেলা আষাঢ়। ছবি : সংগৃহীত
আজ পহেলা আষাঢ়, ঋতুরানী বর্ষার প্রথম দিন। ঋতুচক্রের ষড়ঋতুর মধ্যমণি এই বর্ষা, যেন প্রকৃতির শুদ্ধিকরণের এক শুভাগমন। একটানা খরতাপে ক্লান্ত নগরজীবনের পর হঠাৎ এক সকালে যখন আকাশে জমে ওঠে গাঢ় ধূসর মেঘ, চারদিক যেন নিস্তব্ধ হয়ে অপেক্ষায় থাকে—বৃষ্টি নামবে, একটু শান্তি দেবে, একটু শীতলতা ছড়িয়ে দেবে চারপাশে। আজকের এই দিনটি ঠিক তেমনই এক প্রতীক্ষার অবসান।
বছরের এই সময়টায় আকাশ আর মাটি যেন একে অপরের প্রেমিক হয়ে ওঠে। আকাশ ঝরে পড়ে ধরণীর বুকে, আর ধরিত্রী মেখে নেয় সে ভালোবাসা, ভিজে ওঠে হৃদয়ের গভীরে। ধূলিধূসরিত শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামের ধানখেত, গাছপালা, নদীনালা—সবই যেন প্রাণ ফিরে পায়। বাতাসে ভেসে আসে কদম ফুলের সুবাস, বৃষ্টির ফোঁটায় দুলে ওঠে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার ডালপালা।
শহরের কংক্রিটের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর পাতাগুলো আজ একটু বেশি সবুজ, একটু বেশি সতেজ। ফুটপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা মানুষদের মুখে আজ নতুন একটা প্রশান্তি। ছাতা মাথায় হাতে বই, কলেজপড়ুয়া মেয়েটা হেসে বলছে বন্ধুকে, "বর্ষা এলো রে!" পাশেই এক চায়ের দোকানে বসে থাকা দুই বৃদ্ধের আড্ডা থেমে যাচ্ছে না—"আমাদের সময়ের বর্ষা ছিল জমজমাট!" বর্ষা যেন স্মৃতির জানালাও খুলে দেয়।
তবে শুধু রোমান্স নয়, বর্ষা মানেই কৃষকের আশার আলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে যারা দিন গোনে, চাষাবাদের প্রস্তুতি নেয়—তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋতু। ধান, পাট, শাকসবজি—সবকিছুতেই নতুন প্রাণ সঞ্চার করে এই বর্ষা। বৃষ্টির ফোঁটা তাদের চোখে অন্নের সম্ভাবনা হয়ে ঝরে পড়ে।
আরো পড়ুন : সোমবার থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের শঙ্কা
আবার এই বর্ষাই কখনো হয়ে ওঠে রুদ্র। নদীর জলধারা বেড়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয় বসতি, কাঁচা ঘর, পথঘাট। নগরীতে সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা, বিপাকে পড়ে স্কুলগামী শিশু থেকে অফিসযাত্রী। সেই দুর্ভোগের মধ্যেও মানুষ খুঁজে নেয় সাহস আর সহিষ্ণুতার গল্প।
বর্ষা তাই শুধুই আনন্দ নয়, এটি দ্বৈত স্বর—কখনো স্নিগ্ধ, কখনো রূঢ়। এই দ্বৈততা নিয়েই বর্ষা বাঙালির প্রাণে গেঁথে থাকে চিরকাল।
বর্ষা মানেই গান—“এসো হে বৈশাখ” যেমন নতুন বছরের আহ্বান, তেমনি “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর” বর্ষার অমর প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ থেকে আধুনিক গীতিকার—সকলেই বর্ষার প্রশংসা করেছেন নানা রূপে, নানা সুরে। বৃষ্টির শব্দে, মাটির গন্ধে, কদমের ছায়ায় বাঙালি হৃদয় তার অনুভবকে খুঁজে পায়।
আজকের এই দিনে, যখন আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা-কালো মেঘ, যখন প্রথম ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে কারো জানালায়, কোনো কবি হয়তো তুলে নেয় কলম—লিখতে বসে নতুন কোনো কবিতা, নতুন কোনো প্রেমের গল্প। কেউ হয়তো কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দেয় পাশের ড্রেনের জলে, আরেকজন হয়তো মুঠোফোনে ধারণ করে মেঘলা আকাশ।
ঋতুরানী বর্ষা তাই একদিনে শেষ হয় না। সে দীর্ঘজীবী, সে গভীর। আজ তার আগমন, যেন এক নতুন সূচনা। যেন একটি দীর্ঘ প্রহরের পর শুরুর ঘণ্টা বাজল। তাই বর্ষার এই প্রথম দিনে কামনা—এই বর্ষা হোক শান্তির, সৃজনের ও স্নিগ্ধতার। হোক বাঙালির হৃদয়ে আবার নতুন করে জেগে ওঠা আবেগের বারিধারা।