জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কোনও ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছেন। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই আমরা।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড় ময়দান থেকে এনসিপি'র নেতা-কর্মীদের নিয়ে পদযাত্রা শেষে দিনাজপুর শহরে ইনস্টিটিউট মাঠে আয়োজিত এনসিপির পদযাত্রা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, দিনাজপুর একটি ঐতিহাসিক ও বৃহৎ পুরাতন জেলা। এই জেলার রাস্তাঘাট বিগত সময়ে দু'টি দলের রোষানলে পড়ে এখন পর্যন্ত বেহাল অবস্থায় রয়েছে। যা দেখে আমি খুব বিব্রত হয়েছি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার গঠনে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরের উন্নয়ন সফল করা হবে।
তিনি বলেন, দিনাজপুর খাদ্য শস্য ভান্ডার, এই জেলার খাদ্য শস্য দিয়ে সারা দেশের চাহিদা পুরণ হয়ে থাকে। অথচ এখানকার মানুষ ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এই বিষয়টিকে আর কখনো হতে দেয়া যাবে না।দিনাজপুর থেকে সব ধরনের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। ২৪-এর আন্দোলন এই জেলার মানুষের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। এই জেলা থেকে ৯ জন শহীদ হয়েছে, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। দিনাজপুরের মানুষকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আমরা উন্নয়ন বলতে শুধু ঢাকার উন্নয়ন বুঝি না। আমরা মনে করি,দিনাজপুরের মতো পুরাতন ও বৃহৎ জেলাগুলোকে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একই কাতারে রাখতে পারলে সেটাই হবে উন্নয়ন। দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য রেখে কোন কাজ করা যাবে না, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন,আমরা বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এই পদযাত্রা শুরু করেছি। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সনদের বাস্তবায়নে জনগণকেই আমাদের একমাত্র শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছি। দিনাজপুর কৃষকদের জেলা, দেশে কৃষক নিপীড়ন রয়েছে। আমরা সেই দেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কোনো গণনিপীড়ন থাকবে না।
সমাবেশে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা সেবা হয় না, এখানে ৪৮ ভাগ জনসাধারণ চিকিৎসা সেবায় বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতাল আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই, জনবল নেই, এই বিষয় থেকে দিনাজপুর মানুষকে আর বঞ্চিত হতে দেয়া যাবে না। কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায় না, শ্রমিকরা পায় না তাদের ন্যায্য মজুরি। বাজেট বরাদ্দে দিনাজপুরকে উপেক্ষা করা হয়। তিনি দিনাজপুরের এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে তরুণ সমাজ যে আশা জাগিয়েছিল, তা গত এক বছরে বাস্তব রূপ পায়নি। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের মতো মৌলিক দাবিগুলো এখনো অন্ধকারে রয়েছে। তাই আমরা দেশের সব জেলায় যাব, জনগণের মতামত শুনে একটি গণতান্ত্রিক ইশতেহার তৈরি করবো। শহীদ আবু সাঈদের কবর থেকে শুরু হওয়া এই পদযাত্রায় এনসিপির প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা অংশ নিয়েছেন। জুলাই সনদ ও সংস্কার বাস্তবায়নের সংগ্রামে আমরা পিছপা হবো না।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন এনসিপি নেতা রফিকুল ইসলাম কনক, আব্দুল মুনীম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লাহ গালিব, এনসিপি চিকিৎসক সংগঠনের মুখ্য সংগঠক ডাক্তার আব্দুল আহাদ, শ্রমিক উইং নেতা আকিব উদ্দিন ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।