×

জাতীয়

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত আবদুল্লাহ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:১২ পিএম

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত আবদুল্লাহ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে ঢাকার বাইরে, অর্থাৎ কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুক পেজে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পোস্ট করেন। সেখানে তিনি এই ব্যাখ্যা দেন।

মূলত, ওই সময় হঠাৎ করে কক্সবাজার যাওয়ার কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে হাসনাত আবদুল্লাহসহ পাঁচজনকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলে এনসিপি। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিশের লিখিত ব্যাখ্যা ফেসবুকেও পোস্ট করেন তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনও স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু আমি এবং অনেকেই ব্যথিত হই, যখন দেখি এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহিদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি। এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।

তিনি লেখেন, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আমি জানতে পারি; জুলাই আন্দোলনে আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেককে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টিকে আমার কাছে একাধারে রাজনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে হয়েছে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমি। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনও ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

কারণ দর্শানোর নোটিশের ব্যাখ্যায় তিনি লেখেন, এরপর গত ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে জানাই, আমি আমার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি সেসময় অফিসে আহ্বায়ক মহোদয়ের (নাহিদ ইসলাম) সঙ্গে ছিলেন। আমি তাকে অনুরোধ করি যাতে আহ্বায়ক মহোদয়কে বিষয়টি জানান। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাকে জানান, তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর মুখ্য সমন্বয়ক আমাকে নিশ্চিত করেন, আহ্বায়ক মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক মহোদয় এতে সম্মতি প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

কিন্তু এরপরের ঘটনাকে দুঃখজনক হিসেবে সঙ্গায়িত করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেসব উপস্থাপন করেছে। কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ ও সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক লেখেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। ভবিষ্যতে অন্য যে কাউকে করতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়া এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতো। নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়ার এই পুরনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একইসঙ্গে অবাক ও ক্ষুব্ধ করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপি নেতা তাসনিম জারার বিরুদ্ধে ‘নগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেইমিং’ পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, এটি এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক। শুধু একজন নারী হওয়ার কারণে তাসনিম জারাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়। কিছু মিডিয়া চক্রান্তমূলকভাবে তাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করতে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সমন্বিত এই আক্রমণ একটি নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুস্পষ্ট চেষ্টা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা।

গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের যোগসাজশে একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনও অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে তিনি লেখেন, আমাদের পার্টির উচিত ছিল এই গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেয়া। পরিবর্তে পার্টি এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। যেকোনও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনও নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই।

এনসিপি নেতা আরও লেখেন, কারণ আমি পার্টির কোনও আইন লঙ্ঘন করিনি। এমন বিধিবহির্ভূত শোকজ দেয়া এবং অতি উৎসাহী হয়ে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ করবো। আমি এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মনে করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

স্বামী-স্ত্রীকে যেসব কথা বলা উচিত নয়

স্বামী-স্ত্রীকে যেসব কথা বলা উচিত নয়

এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলবেন তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ

এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলবেন তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ

নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফিরবেন তারেক রহমান, নির্বাচনে জিতলে হবেন প্রধানমন্ত্রী

হুমায়ূন কবির বললেন নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফিরবেন তারেক রহমান, নির্বাচনে জিতলে হবেন প্রধানমন্ত্রী

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল, পোস্টালে ভোট দেবেন প্রবাসীরা

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল, পোস্টালে ভোট দেবেন প্রবাসীরা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App