বাংলাদেশি পাসপোর্ট-পরিচয়পত্র নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার খবর এখন আলোচনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেও।
ডেইলি মেইল লিখেছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র থাকার যে প্রমাণ মিলছে, তা তার আগের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ঢাকায় কর্মকর্তাদের রেকর্ড অনুযায়ী, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পরে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইস্যু হয় জাতীয় পরিচয়পত্রও। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজে টিউলিপের ভোটার নিবন্ধন নম্বরও রয়েছে। একইভাবে পাসপোর্ট ডেটাবেজ বলছে, তিনি ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেছিলেন।
বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সী টিউলিপ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি মা-বাবার ঘরে জন্মেছিলেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ থাকলেও ২০১৭ সালে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, আমি ব্রিটিশ, আমি বাংলাদেশি নই।
টিউলিপ বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলার মুখোমুখি, এমন খবর ডেইলি মেইলে প্রকাশিত হওয়ার পর গত জানুয়ারিতে তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। যদিও কোনো অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই লেবার এমপি।
বর্তমানে টিউলিপ, তার মা শেখ রেহানা এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক তার দুই ভাইবোনের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচলে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, টিউলিপের নামে ইস্যু হওয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র আসল।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের এক মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা মনগড়া ও জাল কাগজপত্র ছড়াচ্ছে, যাতে তাদের কথিত বিচারিক প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া যায়।
তিনি আরো দাবি করেন, টিউলিপ কখনোই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, শৈশব থেকেই কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও রাখেননি। এটি তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
গত জানুয়ারিতে লন্ডনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার খবর প্রকাশ হলে টিউলিপ সমালোচনার মুখে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর ছয় মাস আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। এরপরই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নির দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় উপহারের ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
যদিও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে টিউলিপ কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস মন্তব্য করেছিলেন, টিউলিপ যদি তার পরিবারের বাংলাদেশি রাজনৈতিক যোগাযোগ থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য সম্পদের ঝুঁকি সম্পর্কে আরো সচেতন হতেন সেটা তার জন্য ভালো হতো।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অবশ্য তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে সততার উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, টিউলিপের জন্য তার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
গত এপ্রিলে স্কাই নিউজ জানিয়েছিল, বাংলাদেশে পরোয়ানা জারি ও অন্যান্য ঘটনার পর টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ আছে কিনা—এমন প্রশ্ন উঠেছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। জবাবে একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, আমরা নির্দিষ্ট কোনো মামলার বিষয়ে মন্তব্য করি না।
এদিকে প্লট দুর্নীতির মামলার পর দুদক টিউলিপের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে। সেখানে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার গুলশানের একটি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করান এবং এর বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেন।