×

জাতীয়

গ্যাস সংকট আরো বেড়েছে

Icon

দেব দুলাল মিত্র

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৬ পিএম

গ্যাস সংকট আরো বেড়েছে

ছবি : সংগৃহীত

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ছে গ্যাসের সংকট। নগরীর সিংহভাগ এলাকার বাসাবাড়িতে গৃহিণীদের এখন গ্যাসের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে শীতের তীব্রতা যতই বেড়েছে, গ্যাসের সংকটও ততই গ্রাহকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।

আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন খাতেও সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি কোনোভাবেই মেটানো যাচ্ছে না। ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ গত বছরের তুলনায় আরো ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি বেড়েছে।  

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সঙ্গে নিয়েই গ্রাহকদের চলতে হবে। ঘাটতি মেটানোর কোনো সুযোগ পেট্টোবাংলা বা তিতাসের কাছে নেই। এলএনজি আমদানি বাড়ানোই এই ঘাটতি মেটানোর একমাত্র পথ। তবে ডলার সংকটের কারণে সেটাও এখন অসম্ভব। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লসের কারণে গ্যাস অপচয় ও চুরি কিছুটা কমলেও সেটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। গ্যাসের ঘাটতির এটাও একটা অন্যতম কারণ। 

পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে গ্যাসের মোট চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৬১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। দিন দিন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ঘাটতি মেটানোর মতো অবস্থা সরকারের নেই। এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে আবাসিকের গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। 

পেট্রোবাংলা জানায়, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ৫০টি ও ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন ওয়ার্কওভার কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন ব্লকে অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খননের কাজ জোরদার করা হয়েছে। এতে অর্ধেক সফলতা এলেই গ্যাসের ঘাটতি কমবে। এগুলো সবই দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সারাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোরে জন্য প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ৮০০ থেকে ১ হাজার মিলিয়ন ঘটফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাও সমস্যার মধ্যে পড়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যাপক ঘাটতি মেটাতে হলে এলএনজি আমদানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সরবরাহ না বাড়িয়ে অন্য কোনো বিকল্প  নেই। কিন্তু এটাও সম্ভব হবে না ‘ডলার সংকটের’ কারণে। এলএনজি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার সরকারের পক্ষে খরচ করা সম্ভব হবে না। দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু এখানেও ঘাটতির কারণে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অন্যদিকে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সামান্য কিছু গ্যাস পাওয়া গেলেও তা নানা কারণে জাতীয় গ্রিডে আনা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে ভোলা এলাকার গ্যাস এখনো শতভাগ ব্যবহারযোগ্য করা যায়নি। ভোলার গ্যাস পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হলে এই সংকটময় মুহূর্তে ঘাটতি অনেকটাই কমতো।  

ঢাকার সিংহভাগ এলাকার বাসাবাড়ির বাসিন্দারা শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়েছেন। তিতাসের গ্যাসের অভাবে বাসার রান্নার সিডিউল বদলে গেছে। গৃহিণীদের  গ্যাসের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। দিনের বেলায় বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাসের দেখা মেলে না। ঢাকার মধ্যবর্তী এলাকার কিছু অংশে ও ভিআইপি এলাকায় লাইনের গ্যাস পাওয়া গেলেও চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্যাস এখন দুলর্ভ জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

এদিকে আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প খাতেও গ্যাসের সংকট এখন চরমে। বস্ত্র, পোশাক ও অন্যান্য শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ তিতাসের আওতাধীন বেশ কিছু এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গ্যাসের অভাবে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।

ঢাকায় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ জানিয়েছেন, চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি বেড়েই চলছে। তিতাসের গ্রাহক চাহিদা প্রায় ২ হাজার ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত বছরের তুলনায় এবছর আরো ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। যে পরিমাণ গ্যাস পেট্টোবাংলা থেকে পাওয়া যায় তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র, কারখানা, শিল্প, বাণিজ্য, সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দেয়া হয়। এরপর দিতে হয় আবাসিকে। ফলে আবাসিকে প্রায় সারা বছরজুড়েই গ্যাসের ঘাটতি থাকে। 

গ্যাস উত্তোলনে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে তেল-গ্যাস খননকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। সম্প্রতি বাপেক্স আরো তিনটি ক‚প খননের ঘোষণা দিয়েছে। কুমিল্লার শ্রীকাইল, পাবনার মোবারকপুর ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে এই তিনটি ক‚প খনন করা হবে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) তিনটি অনুসন্ধান ক‚প (শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১) খনন শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের ৯০৯ কোটি টাকার সরকার জোগান দেবে। বাকি ২২৭ কোটি দিচ্ছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (বাপেক্স)। আগামী ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিগত সময়ে নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তখন এলএনজির মতো ব্যায়বহুল গ্যাস আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। এখন যে পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা আমদানিনির্ভরতা দিয়ে সহজেই মেটানো সম্ভব হবে না। ১০০ কূপ খননের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার জন্য কার্যকর চেষ্টা নেই বলে মনে হচ্ছে।  

তিনি আরো বলেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ও উত্তোলনের হার ক্রমাগতভাবে কমেই চলেছে। বিপরীতে দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। এখন দেশীয় গ্যাস কূপগুলো থেকে মাত্র ১ হাজার ৭৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে তার চেয়েও কমে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন আরো কমবে, তখন সংকট আরো বাড়বে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি- যেভাবে চাহিদা বাড়ছে, সেই অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় কোনো উদ্যম বা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নানামুখী উদ্যোগের কথা বলা হলেও সরকার দেশের খনি থেকে উৎপাদন বাড়াতে পারছে না। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

রাতের তাপমাত্রা কমবে ২ ডিগ্রি

রাতের তাপমাত্রা কমবে ২ ডিগ্রি

গ্যাস সংকট আরো বেড়েছে

গ্যাস সংকট আরো বেড়েছে

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় সেই গৃহকর্মী গ্রেপ্তার

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় সেই গৃহকর্মী গ্রেপ্তার

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন,  নতুন যে তথ্য দিলো পুলিশ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন, নতুন যে তথ্য দিলো পুলিশ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App