হাদির হত্যাকারীরা অন্য দেশে পালিয়েছে কি-না, এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি : সংগৃহীত
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন কি না—এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, তাদের বর্তমান অবস্থান শনাক্তে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম রোববার দুপুরে বিবিসি নিউজ বাংলাকে বলেন, মূল সন্দেহভাজনদের অবস্থান নিশ্চিত করতে তদন্ত চলছে। এর আগের দিন ইনকিলাব মঞ্চ হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানাতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রগতি জানানো না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাদি হত্যা মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ডিবি প্রধান জানান, গত আট দিনে মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কোন অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে—এসব আমরা শনাক্ত করেছি এবং উদ্ধারও করেছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত মামলায় ডজনখানেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামির বাবা, মা, স্ত্রী, শ্যালক ও এক বান্ধবীও রয়েছেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলার আগে ফয়সাল করিম মাসুদ একাধিকবার তার স্ত্রী, বান্ধবী ও শ্যালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। তাদের তিনজনকে দুই দফায় মোট নয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
হামলার আগে ও পরে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার অভিযোগে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালানোর তথ্য পাওয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকেও আটক করা হয়েছে।
তবে ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখের অবস্থান সম্পর্কে এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দাবি উঠলেও ডিবি বলছে, এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে, তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে হামলাকারীদের বৈধভাবে দেশত্যাগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি তাদের পাসপোর্ট ব্লক করায় বৈধ পথে দেশ ছাড়ার সুযোগও নেই। তবে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে জানাজার পর তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়ে হত্যার দ্রুত বিচার দাবি জানান।
