এনসিপিতে জামায়াত জোট নিয়ে দ্বিমত, নাহিদ ইসলামকে ৩০ নেতার আপত্তিপত্র
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন নেতা। তারা এ বিষয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ জানিয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে লিখিত চিঠি দিয়েছেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) চিঠিটি দেওয়া হয়। দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে নেতারা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্ভাব্য জোট এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের মতে, এমন জোট দলটির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির বিভাজনমূলক রাজনীতি, বিভিন্ন দলে গুপ্তচরবৃত্তি ও স্যাবোটাজ, এনসিপির ওপর অপকর্মের দায় চাপানোর চেষ্টা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) ও পরে ছাত্রশক্তি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে।
পাশাপাশি অনলাইন ফোর্স ব্যবহার করে এনসিপি ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্রহননের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এসব কর্মকাণ্ড ধর্মকেন্দ্রিক সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতে ইসলামীর স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে বিরোধপূর্ণ।
চিঠিতে আরো বলা হয়, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেড় হাজারের বেশি মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো রাজনৈতিক জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মনে করেন তারা।
নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর এনসিপির সমর্থক কর্মী-সংগঠকসহ একটি বড় অংশ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মধ্যপন্থী ও নতুন রাজনীতি প্রত্যাশী সমর্থকদের সমর্থন হারালে ভবিষ্যতে দলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করেন তারা।
চিঠিতে স্পষ্টভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোটে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, নীতিগত অবস্থানের ভিত্তিতেই কৌশল নির্ধারণ করা উচিত, কৌশলগত সুবিধার জন্য নীতিগত অবস্থান বিসর্জন দেওয়া সমীচীন নয়।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনীসহ আরো অনেকে।
