রথযাত্রায় জগন্নাথের মানবসঙ্গী লক্ষাধিক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠছে রাজধানীর ঢাকার স্বামীবাগের ইসকন মন্দির। এই প্রথম নবযৌবন বেশ, নেত্র উৎসব, রথযাত্রা সব একই দিনে হয়েছে। এরপরেই শুক্রবার (২৭ জুন) শুক্লপক্ষের পূণ্যতিথিতে টান পড়ল রথের রশিতে। রথের রশি ছুঁতে ভিড় জমিয়েছেন কাতারে কাতারে ভক্ত। রাজধানী শহরে উপচে পড়েছে ভিড়। মুহুর্মুহু শোনা গেছে জয় জগন্নাথ ধ্বনি। সকালে মঙ্গলারতি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপরে হয় যজ্ঞ। যজ্ঞ শেষে বিকেল তিনটায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব।
এদিন বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকায় এই রথযাত্রার আয়োজন করেছে।
প্রসঙ্গত, ইসকন গত বুধবার এক মতবিনিময় সভায় বলেছিল, এবারের রথযাত্রায় জগন্নাথের মানবসঙ্গী হবেন লক্ষাধিক ভক্ত। ২৭ জুনের রথযাত্রায় তা দেখাও গেছে। জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ, বলরামের তালধ্বজ আর সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন বা পদ্মধ্বজ। এরপর ইসকনের সাধুরা সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা ঝাঁট দিয়েছেন। এই রীতিকে বলা হয় ছেড়াপহরা। দুপুরে খিচুড়ি ভোগ খেয়ে মাসির বাড়ি রওনা দেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। একেই রথযাত্রার শোভাযাত্রা বলা হয়। রথযাত্রায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকার পাশাপাশি রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি।
রথযাত্রা স্বামীবাগ আশ্রম থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছায়। ৯ দিন পরে ৫ জুলাই বেলা তিনটায় একই পথে উল্টো রথের শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আসবে। শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসকন ৯ দিনব্যাপী শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের এ রথযাত্রার আয়োজন করেছে।
এ বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে গতকাল সকাল আটটায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে তিনটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি গোকুল ভি কে উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
এছাড়া ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন। রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রথযাত্রায় টহল দল, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুট প্যাট্রল, রুফটপ পার্টি, হোন্ডা মোবাইল টিম, গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), সাদাপোশাকে গোয়েন্দা, সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় ইসকনের পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকেন।