×

বিশেষ সংখ্যা

শোকের শক্তিতেই বাঙালির অগ্রযাত্রা

Icon

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শোকের শক্তিতেই বাঙালির অগ্রযাত্রা
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলো। আজ জাতীয় শোক দিবস-২০২১। এই শোককে নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবতে চাই। যুগে যুগে ১৫ আগস্টের মতো নির্মম হত্যাকাণ্ড পৃথিবীতে অনেক হয়েছে। কিন্তু সে হত্যাগুলো সুনির্দিষ্ট আদর্শ-বিশ্বাস ও মানব কল্যাণের অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ৫০১ সদস্যবিশিষ্ট বিচারিক প্যানেলের মাধ্যমে গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসকে হেমলক পানে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তার দর্শনকে হত্যা করা যায়নি; বরং সম্প্রতি সেই গ্রিসের একটি আদালতই ২৪১৫ বছর পরে সক্রেটিসকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। অহংকার ও দাম্ভিকতার বশে আব্বাসীয় খলিফা আল মুনসুর ইমাম-ই আজম আবু হানিফা (র.)-কে কারাগারে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। অথচ প্রায় তেরোশ বছর ধরে তার শিক্ষা আমাদের আলোকিত করে যাচ্ছে। কেবল হীন মানসিকতা ও প্রতিহিংসার বশে হত্যা করা হয়েছিল বর্ণবাদবিরোধী কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লোথার কিংকে। অথচ সেই হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার দশক পরে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পরপর দুবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ঘৃণ্যতম এক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন- যে প্রতিহিংসা ছিল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক। পরিশ্রম, মেধা-মনন, সাহস, সততা, আত্মমর্যাদা, জাতীয়তাবোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, গণমানুষের স্বাধিকার-অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একজন শেখ মুজিব তৎকালীন সময়ের অন্যান্য দল ও নেতাদের চেয়ে এতো এগিয়ে গিয়েছিলেন যে, তাদের জন্য তিনি ধরা-ছোঁয়ার অনেক উপরে উঠে গিয়েছিলেন; এজন্য তাদের অনেকের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। আবার পৃথিবীর এক কোণে এতো ছোট অঞ্চলের একজন নেতা হয়েও ১৯৭১-এ তাঁর অভূতপূর্ব বিজয়, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা, বিশ্বমঞ্চে আত্মমর্যাদাশীল দাপট, অকুতোভয়ে সত্যপ্রকাশ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে জোরালো অবস্থান এবং এশীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ প্রতিনিধিত্ব ও ভৌগোলিক আধিপত্যসহ নানাবিধ কারণে তিনি তৎকালীন পরাজিত শক্তি ও বিশ্বমোড়লসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েন; শিকার হন ঘৃণ্যতম প্রতিহিংসার। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্র মিলে জঘন্যতম ষড়যন্ত্র করে। শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি- হত্যা করা হয়েছিল তাঁর পরিবারকে, তাঁর আত্মীয়-স্বজন এবং তাঁর আদর্শের অনুসারী দলীয় নেতাদেরকে। শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি- কালো আইন করে হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও বন্ধ করে দিয়েছিল। খুনি চক্রের সেই দাম্ভিকতার পতন হয়েছে- দীর্ঘ ২১ বছর পর সেই কালো আইন বাতিল করে বিচার শুরু হয়; অপরাধীদের সমস্ত আইনি অধিকার নিশ্চিত করা বিচার ব্যবস্থায় ১২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়- দীর্ঘ ৩৫ বছর পর একদিনে ৫ জনের ফাঁসি হয়। এরপর আরো দশ বছর পর অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৪৫ বছর পর পালাতক আরেক খুনিকে আটক করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এতে আমাদের কষ্ট লাঘব হয়নি। কেননা যাদের ফাঁসি হয়েছে এরা হলো হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী; কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা কিছু করতে পারিনি। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে আমরা যতটুকু জানি তার চেয়ে অনেক বেশি বুঝতে পারি; অথচ কিছু করতে পারছি না। তাই কষ্টের অনুভবটা অনেক বেশি। বাঙালি জাতিতে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান যেমন হিমালয়ের মতো দৃঢ়, তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা যেমন এভারেস্টের চেয়েও উঁচু তেমনিভাবে আমাদের কাছে তাঁর হত্যাকাণ্ডের শোক প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম খাদ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চেয়ে গভীর। কিন্তু সেই শোককে আমরা স্রোতে হারিয়ে যেতে দেবো না। বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবন যেন ফিউশন বিক্রিয়া- কেননা জীবনে জাতিকে তিনি অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। আর তাঁর মৃত্যু যেন আমাদের কাছে সুপারনোভায় নক্ষত্রের বিস্ফোরণ- তাঁকে যদি এমন জঘন্যভাবে হত্যা করা না হতো তাহলে হয়তো আমাদের মাঝে এমন সৃজনশীল প্রতিশোধের প্রত্যয় সৃষ্টি হতো না। দার্শনিক সক্রেটিস মৃত্যুর আগে শিষ্য ক্রিটোকে একটা মোরগ দিয়ে ঋণ পরিশোধের জন্য বলেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুর অজস্র ভক্ত-অনুরাগী জীবন-যৌবন দিয়ে তাঁর রক্তের ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর রক্ত আমাদের কাছে এতোই মূল্যবান যে, এতো সহজে ঋণ পরিশোধ হবার নয়। আমরা বাঙালি সভ্যতা বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাই। মৃত্যুর আগে সক্রেটিসের শেষ বাক্য ছিলো- ‘তারা আমার দেহকে হত্যা করতে পারবে, আত্মাকে নয়।’ একজন শিষ্য প্লেটোর মাঝে তিনি নতুনভাবে বেঁচে উঠেছেন এবং প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে তিনি সমান আগ্রহে বেঁচে আছেন। দার্শনিক সক্রেটিসের মতো বঙ্গবন্ধুর দেহকে হত্যা করা গেছে কিন্তু তাঁর আত্মা ও আত্মমর্যাদাকে হত্যা করা যায়নি; তাঁর স্বপ্ন ও জাগরণকে হত্যা করা যায়নি। সক্রেটিস যেমন প্লেটোর মাঝে জীবন পেয়েছেন তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু জীবন পেয়েছেন শেখ হাসিনার মাঝে- শেখ হাসিনা যেন বঙ্গবন্ধুর প্লেটো। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য, আত্ম-বিকাশ ও আত্ম-পরিচয়ের জন্য শেখ হাসিনার যে প্রাণান্তর প্রচেষ্টা, সে অগ্রযাত্রা আমাদের অব্যাহত রাখতেই হবে। আমরা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে চাই, সত্য-ন্যায়-নিষ্ঠা আর প্রগাঢ় বিশ্বাসের স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না। আমরা প্রমাণ করতে চাই- বঙ্গবন্ধু, চীনা পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো অমর আত্মা, তাঁর স্বপ্ন অমর স্বপ্ন। আমরা বাংলাদেশকে এমন একটি সমৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যাতে করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল তারা যেন স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, একজন শেখ মুজিবকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে হত্যা করা ছিল বড় ভুল। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, আমরা বঙ্গবন্ধুর বাঙালি- বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমাদের শোক প্রকাশ হবে বাঙালিকে পৃথিবীতে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা; বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমাদের শোক প্রকাশ হবে পৃথিবীতে মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমাদের শোক প্রকাশ হবে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর জন্য শান্তিপূর্ণ, সৃজনশীল ও কল্যাণকর দেশ ও জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সর্বোপরি আগামীর পৃথিবীকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বা একটি বাঙালি সভ্যতা উপহার দেয়া। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু; আগামীর পৃথিবীতে বাঙালি সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে এক পরিবর্তন

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে এক পরিবর্তন

জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে: আলী রীয়াজ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে: আলী রীয়াজ

সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন

সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App