এআই ও অটোমেশন
ব্যবসায় বিপ্লবের নতুন অধ্যায় ও ভবিষ্যতের পেশা প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

ব্যবসায় বিপ্লবের নতুন অধ্যায় ও ভবিষ্যতের পেশা প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার
বিশ্বজুড়ে ব্যবসার ধরন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিটি কাজে সময় লাগত অনেক, প্রয়োজন হতো প্রচুর জনবল এবং জটিল প্রক্রিয়া, এখন সেই কাজগুলো করছে সফটওয়্যার নিজেই দ্রুত, নির্ভুল এবং ক্লান্তিহীনভাবে। এই রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং অটোমেশন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল প্রযুক্তির উন্নতি নয়, বরং ব্যবসার ভবিষ্যৎ পুনর্লিখনের সূচনা।
অটোমেশনের উদ্দেশ্য মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়া নয়, বরং মানুষকে একঘেয়ে ও পুনরাবৃত্ত কাজ থেকে মুক্ত করা। যেমন, একটি অনলাইন দোকানে অর্ডার এলে সফটওয়্যার নিজেই গ্রাহককে ধন্যবাদ জানায়, বিল তৈরি করে, ডেলিভারি টিমকে বার্তা পাঠায় এবং বিক্রির রিপোর্ট মালিককে পাঠিয়ে দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই। বর্তমানে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার জন্য এই অটোমেশনকে সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর করে তুলছে জনপ্রিয় টুল এনএইটএন।
এনএইটএন সফটওয়্যার ব্যবসার বিভিন্ন অংশ যেমন ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রিপোর্ট বা তথ্যভান্ডার একত্রে সংযুক্ত করে একটি একক ব্যবস্থার আওতায় আনে। একবার সেটআপ করা হলে এটি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যায়, ফলে ব্যবসা পরিচালনা হয় আরও দ্রুত, সুশৃঙ্খল ও ব্যয় সাশ্রয়ীভাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অটোমেশন শুধু কাজের গতি বাড়ায় না, এটি ব্যবস্থাপনায় নির্ভুলতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা আনে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন কেবল একটি সফটওয়্যার নয়, এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বুদ্ধিদীপ্ত সহকারী হিসেবে কাজ করছে। একটি এআই ব্যবস্থা গ্রাহকের বার্তা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারে সেটি অভিযোগ, প্রশংসা না তথ্যের অনুরোধ। এরপর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাসঙ্গিক উত্তর দেয় বা সংশ্লিষ্ট টিমের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ফলে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়, গ্রাহক সন্তুষ্ট থাকেন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ শক্তিশালী হয়।
বর্তমান ব্যবসা জগতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। কিন্তু প্রতিদিন পোস্ট তৈরি, মন্তব্যের উত্তর দেওয়া এবং রিপোর্ট বানানো সময়সাপেক্ষ কাজ। এখন এআই ও এনএইটএন এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করছে। পোস্টের ক্যাপশন, হ্যাশট্যাগ, প্রকাশের সময়সূচি নির্ধারণ, এমনকি চলমান প্রবণতা বিশ্লেষণ পর্যন্ত সব কিছুই করা সম্ভব অটোমেশনের মাধ্যমে। ফলে ব্যবসা অনলাইনে সক্রিয় থাকে দিনরাত, মালিক বিশ্রাম নিলেও।
অটোমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে গড়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ পর্যন্ত পরিচালন ব্যয় কমানো সম্ভব। একই কর্মী এখন রুটিন কাজের পরিবর্তে সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে সময় দিতে পারছেন। এতে কর্মদক্ষতা যেমন বাড়ছে, তেমনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে দ্রুত ও তথ্যনির্ভরভাবে।
বাজারে টিকে থাকতে এখন শুধুমাত্র ভালো পণ্য নয়, প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত ও নিখুঁত বাস্তবায়ন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন এই তিন ক্ষেত্রেই ব্যবসাকে এগিয়ে রাখছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, যারা এখন অটোমেশন গ্রহণ করছে, ভবিষ্যতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ থাকবে না।
বাংলাদেশেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এআই ও অটোমেশনের ব্যবহার। ই-কমার্স, ডিজিটাল বিপণন, শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার ও বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করছে, ডিজিটাল সংস্থাগুলো পোস্ট, রিপোর্ট ও বিজ্ঞাপনের বিশ্লেষণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। রেস্টুরেন্ট ও সার্ভিস খাতে এখন গ্রাহক বুকিং ও রিভিউ ব্যবস্থাপনাও অটোমেটেড। ফলে সময় বাঁচছে, খরচ কমছে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের অন্তত অর্ধেক ডিজিটাল ব্যবসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর অটোমেশন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে।
এআই যত উন্নত হচ্ছে, তার কার্যকারিতা তত বেশি নির্ভর করছে নির্দেশ দেওয়ার দক্ষতার ওপর। এই নির্দেশ বা প্রম্পট তৈরি করেন যাঁরা, তাঁদের বলা হয় প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের ভাষা বোঝে, কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করাতে হলে তাকে নিখুঁত নির্দেশ দিতে হয়। প্রম্পট ইঞ্জিনিয়াররা সেই নির্দেশ তৈরি করে মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগের সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন। বিশ্বের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই এই পদের জন্য উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। বর্তমানে এই ক্ষেত্রের মাসিক বেতন আট হাজার থেকে বিশ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার দক্ষতাই আসল যোগ্যতা।
বাংলাদেশে ডিজিটাল খাতে দ্রুত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন নির্ভর কাজ। ই-কমার্স, শিক্ষা, সফটওয়্যার এবং বিপণন খাতে এখন প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার ও এআই পরামর্শক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। এই দক্ষতা এখন কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং ব্যবসায়িক সাফল্যের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি আজকের ব্যবসার বাস্তবতা এবং আগামীর প্রস্তুতি। যারা আজ প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে শিখছে, আগামীকাল তারাই হবে নেতৃত্বে। বিশ্বজুড়ে এখন এক বাস্তব সত্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে না, বরং যারা এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে জানে, তারাই এগিয়ে যাবে তাদের চেয়ে যারা এখনো শেখেনি।
আইটি বিশেষজ্ঞ ও অটোমেশন পরামর্শক কাজী মিনহার মোহসিন বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন এক সোনালি সময়ের দোরগোড়ায়। অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ করলে তারা শুধু খরচ বাঁচাতে পারবেন না, বরং নিজেদের ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, তিনি বিভিন্ন ব্যবসাকে সহায়তা করছেন তাদের কার্যপ্রণালীকে স্বয়ংক্রিয় ও তথ্যনির্ভর করে তুলতে, যাতে তারা সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় করে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তাঁর মতে, এখনই সময় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশনকে ব্যবসার মূল অংশ করে তোলার, কারণ ভবিষ্যৎ তাদেরই যারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে জানে।
যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যপ্রণালীকে স্মার্ট, দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় করতে চায়, তারা আইটি বিশেষজ্ঞ কাজী মিনহার মোহসিনের পরামর্শ নিতে পারেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন বাস্তবায়নে তাঁর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বহু প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যেই নতুন গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।