নতুন শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের, ওলট-পালট অর্থনীতি, ডলারের বড় দরপতন

দুরুল হক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সব পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া বিদেশে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত অ্যাপল আইফোনে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ১ জুন থেকে প্রস্তাবিত এই শুল্ক কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ আবারো তীব্রতর হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। বিশ্বজুড়ে ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। মার্কিন ডলারের বড় দরপতন ঘটেছে। লাফিয়ে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেলের দর। অস্থিরতা নেমে এসেছে বন্ড মার্কেটে।
২৩ মে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' ট্রাম্প লেখেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে না। তাই ১ জুন থেকে আমি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি। এছাড়া বিদেশে তৈরি অ্যাপলের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এরপরই বিশ্ব অর্থনীতিতে ওলট-পালট ঘটে।
আমেরিকার পুঁজিবাজারে মন্দা নেমে এসেছে। দেশটির ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক নিম্নগামী হয়েছে ২৫৬ দশমিক ০২ পয়েন্ট। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইনডেক্স নিম্নমুখী হয়েছে ৩৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট। নাসডাক কম্পোজিট সূচক কমেছে ১৮৮ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। বাজে অবস্থা বিরাজ করছে ইউরোপের শেয়ারবাজারেও। প্যান-ইউরোপিয়ান স্টোক্স ৬০০ ইনডেক্স পড়েছে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। অ্যাপলের শেয়ারের পতন ঘটেছে ৩ শতাংশ।
কেবল একদিনে প্রধান ৬ বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে ডলার সূচক নিম্নমুখী হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। মার্কিন মুদ্রার ইনডেক্স দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ০৯-এ। গত ৩ সপ্তাহের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। সবমিলিয়ে গত ১ সপ্তাহে ডলারের মান হ্রাস পেয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে গত এপ্রিলের প্রথমদিকের পর যা সর্বোচ্চ পতন।
শুধু একদিনে জাপানের কারেন্সির বিরুদ্ধে ডলারের দাম কমেছে ১ শতাংশ। প্রতি ইউএস মুদ্রার মূল্য স্থির হয়েছে ১৪২ দশমিক ৪৮ ইয়েনে। গত ২ সপ্তাহের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।
অন্যদিকে, ইউরোর দর ঊধ্র্বমুখী হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মূল মুদ্রার দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ১ ডলার ১৩৬৩ সেন্টে। গত ২ সপ্তাহের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ বছর মেয়াদি বন্ড ইল্ড নিম্নগামী হয়েছে ২ দশমিক ২ পয়েন্ট। ১০ বছর মেয়াদি ইল্ড নিম্নমুখী হয়েছে ৩ দশমিক ৬ পয়েন্ট।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে শুল্ক স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়েছিলেন, বিশ্ব অর্থনীতি চাঙা হবে। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন হুমকিতে সেই আস্থা আবারও নড়বড়ে হয়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এক লাফে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রতি আউন্সের দর দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬৪ ডলারে। সর্বকালে যা প্রায় সর্বোচ্চ।
জ্বালানি তেলের দরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দর ঊধ্র্বগামী হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৬৪ ডলার ৭৮ সেন্টে। যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ডব্লিউটিআইয়ের দাম একই সমান বেড়েছে। ব্যারেলপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬১ ডলার ৫৩ সেন্টে।