সীমান্তে বাংলাদেশিদের ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় উত্তেজনা

কামরুজ্জামান আরিফ
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্র্তৃক বাংলাদেশিদের পুশইন অব্যাহত রেখেছে। গত ২০ দিনে প্রায় ৬০০ জনকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে গত তিন দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ জনের পুশইন ঘটেছে। এই ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সীমান্তে এই উত্তেজনা কেন?আর ভারত যাদের জোর করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে পাঠাচ্ছেন সেটা কতটা আইন সঙ্গত?
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করে দেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। সীমান্তে পুশ-ব্যাক এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই স্বীকার করে না।
শুধুমাত্র ভারতের গুজরাত এবং রাজস্থানেই গত তিন সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যগুলোর পুলিশ। তাদের দাবি, এই চিহ্নিতরা বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছিলেন।
গুজরাত ও রাজস্থান - দুই রাজ্যের পুলিশই জানিয়েছে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন, তাদের সকলকেই ফেরত পাঠানো হবে। ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বাংলাদেশের এমন নাগরিকদের ধরা হচ্ছে যারা পুলিশের কথায় 'অনুপ্রবেশকারী'।
এরই মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশইন করা হয়, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু, পাঁচজন নারী ও পাঁচজন পুরুষ। পুলিশ তাদের আটক করে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কারাগারে নিয়ে যায় এবং পরে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ি সীমান্তে মঙ্গলবার ভোরে ১৪ জনকে পুশইনের চেষ্টা করা হয়। বিজিবি বাধা দিলে বিএসএফের সঙ্গে পুশইন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের পুশইন করছে ভারতী বাহিনী।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে ১৭ জনকে পুশইন করা হয়। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ, চারজন নারী ও ৯ জন শিশু, যাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, বিজিবি তাদের গোমস্তাপুর থানায় হস্তান্তর করেছে। থানার ওসি রইস উদ্দিন জানান, আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে ছিলেন এবং সীমান্তে ঘোরাঘুরির সময় বিজিবি তাদের হেফাজতে নেয়।
অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে চারটি কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানালেও দিল্লি এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে, সীমান্তে চলমান পুশইন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান ও আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
তবে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাজশাহীতে বলেন, ‘সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ।