সরকারি সার মজুদ ও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি
লালমনিরহাটে ট্রাক বোঝাই ৪১৬ বস্তা সার জব্দ
রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৫ এএম
লালমনিরহাটে ট্রাক বোঝাই ৪১৬ বস্তা সার জব্দ। ছবি: ভোরের কাগজ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় সরকারি বরাদ্দের সার মজুদ করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলার উমর ফারুককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে পাটগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কে ট্রাকযোগে সার পাচারের সময় ওই ডিলারকে আটক করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়দের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাসের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ৪১৬ বস্তা সার জব্দ করা হয়। সরকারি বরাদ্দের এসব সার স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত দামে বিক্রির কথা থাকলেও ডিলার উমর ফারুক তা গোপনে মজুদ করে অধিক মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন।
স্থানীয় কৃষকরা বিষয়টি টের পেয়ে ট্রাকসহ সার আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। পরে সারগুলো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার হেফাজতে রাখা হয়। সার ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৬-এর বিধান অনুযায়ী ডিলার উমর ফারুককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস।
ইউএনও জানান, জব্দকৃত সার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কৃষকদের প্রাপ্য সার কোনোমতেই পাচার বা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। কৃষক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।”
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, অসাধু ডিলারদের মজুদবাজির কারণে এলাকায় কৃত্রিম সার সংকট তৈরি হয়। ফলে কৃষকদের সময়মতো সার না পেয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় এবং অনেক সময় খুচরা বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হতে হয়।
কৃষক আব্দুল হালিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ডিলারের দোকানে গেলে সার নেই বলা হতো। অথচ এত সার গোপনে মজুদ ছিল, প্রশাসন ধরার আগে আমরা কিছুই জানতাম না।”
উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি সার সরবরাহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও অভিযান চালানো হবে। কোনো ডিলার সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সমাজের একজন প্রতিনিধি বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের দুর্বল তদারকির সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ডিলাররা। এর ফলেই এ ধরনের অনিয়ম বাড়ছে।”
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইখুল আরিফিন বলেন, “এটি গুরুতর অপরাধ। জরিমানার পাশাপাশি অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা পর্যায়ে আলোচনা চলছে।”
