ডেঙ্গু পরিস্থিতি
বছরের সর্বোচ্চ সংক্রমণ
সেবিকা দেবনাথ
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অক্টোবরে যে ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করবে- এই শঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালে ভর্তিকৃত দৈনিক রোগীর সংখ্যা সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গুরোগী। এর আগে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভর্তি রোগী ছিল ৫ অক্টোবর। ওই দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৪২ জন।
এদিকে কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও দেশের ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে না, শীতেও থাকবে এডিস মশার দাপট। ফলে বাড়বে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা। শুধু তাই নয় চলতি বছরের সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে চলতে পারে আগামী বছরও।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, চলতি মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে বৃষ্টি কমেছে। এতে মশার বংশবৃদ্ধির গতি কমে আসতে পারে। তবে চলতি মাসের শেষে সাগরে নিম্নচাপটি এরইমধ্যে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এই লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ হলে আবারো বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। তখন এডিস মশার বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ আবারো তৈরি হবে। এতে করে মশা যেমন বাড়বে তেমনি বাড়তে পারে ডেঙ্গুরোগীও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এ বছর থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজননের ধারবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এখন বৃষ্টি না হলেও আবারো বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। ফলে বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশই পাচ্ছে এডিস মশা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো কার্যকারিতাও দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিত বলছে, এ বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু কমবে না। ডেঙ্গুর ব্যাপকতা নিয়েই নতুন বছরের যাত্রা শুরু হবে।
একই কথা বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশাবাহিত রোগবিষয়ক গবেষক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, এ বছর শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাবে। ডেঙ্গুর ঢেউ থাকবে জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ১০ দিন পর আরো একটি বৃষ্টির বলয় থাকবে। ওই বৃষ্টির ফলে যে মশার সৃষ্টি হবে, এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার শীতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছি। এজন্য সচেতনতার অভাব, সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলাই মূলত দায়ী।
এদিকে গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু পরিস্থিতির দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন। এই সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। শনিবার ও শুক্রবার ডেঙ্গুতে কারোর মৃত্যু হয়নি। শনিবার ভর্তি রোগী ছিল ৬৫৯ জন ও শুক্রবার রোগী ছিল ৪৬৮ জন। বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের, ভর্তি রোগী ছিল ৮০৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃতের সংখ্যা ১২। ২১ সেপ্টেম্বর এত লোকের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪০ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র মিলেছে ৬২ হাজার ৪৪৪ জনের। ডেঙ্গুতে মোট ২৬৩ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু (১২৯ জন) হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। অক্টোবর মাসের ২৬ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ হাজার ৯৮ জন। প্রাণ হারিয়েছে ৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর দৈনিক তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশন এলাকা বাদে)। সেখানে রোগী ২৮২ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বরিশাল বিভাগ। সেখানে রোগী ১৮৬ জন। তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়, এখানে রোগী ১৬৫ জন। এরপর রোগী বেশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী ১৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে রোগী ছিল ১২১ জন, খুলনা বিভাগে ৬৫ জন, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী এই দুই বিভাগেই ৫৬ জন করে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।
এছাড়া রংপুর বিভাগে ৫০ জন আর সিলেট বিভাগে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮ জন। অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ২ জন বরিশাল বিভাগের। বাকি দু’ই জনের একজন রাজশাহী বিভাগের এবং অপরজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ হাজার ৫১ জন।
