×

অর্থনীতি

ভোগ্যপণ্য

বাজারে মিলছে না সুবাতাস, শীতেও ঘাম ছুটছে ক্রেতার

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২১ পিএম

বাজারে মিলছে না সুবাতাস, শীতেও ঘাম ছুটছে ক্রেতার

ছবি : সংগৃহীত

কিছুতেই যেন স্থির হচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়তি থাকেই। বাজারে এসে বাড়তি দামের কথা শুনে অনেক সময় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ বাড়ে; আর হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যের দাম কমে ৫ থেকে ১০ টাকা। অথচ তা দেখার কেউ নেই। এক্ষেত্রে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভোক্তারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতাদের এমন অভিব্যক্তিই লক্ষ্য করা গেছে। 

আগে থেকেই বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়েছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহেও সব ধরনের পেঁয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো- যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। দেখা গেছে, বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১৫০ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুম শেষ বলে মজুতও কমে আসছে; এ কারণেই মূলত সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। মুড়িকাটা পেয়াজ বাজারে উঠতে এখনো ১৫-২০ দিন সময় লাগবে; তখন দাম কমবে বলে জানান তারা।

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গোপীবাগ বাজারের বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, দেশের যে পেঁয়াজ স্টকে ছিল সেগুলো প্রায় শেষের দিকে। তাই দাম বেড়েছে। যে অবস্থা দেখছি, দুই-তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হয়ে যেতে পারে।

বাজার করতে আসা ফিরোজ হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ভুক্তভোগী। আমাদের সমস্যা সমাধানের কেউ নেই। আমরা ৩শ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ কিনেছি। এখন দেখি কত পর্যন্ত উঠে। 

এদিকে হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের বাজারও। সরকারি নির্দেশনা না মেনেই দাম বাড়িয়েছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। এজন্য সিন্ডিকেটকে দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ব্র্যান্ডভেদে তেলের দাম ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশিতে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা।

আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েছে চালের দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। সরকার ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। এরপর দুদফা সময় বাড়ানো হলেও সবশেষ ৩০ নভেম্বর ছিল আমদানির শেষ সময়। সেই সময়সীমা পেরোনোর পর ১ ডিসেম্বর থেকে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এই আমদানি বন্ধের অজুহাতে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা দাম বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে কাটারি জাতের চাল বিক্রি হতো ৬০ থেকে ৬১ টাকায়, এখন তা ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায় উঠেছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও বেড়েছে চালের দাম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা।

কাঁচাবাজারগুলোতে শীতের সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামে তা পাত্তাই পাচ্ছে না। বাজারে শীতের সবজি ভরপুর থাকলেও দাম এখনো বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা কমলেও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি বলে মনে করেন তারা। 

বাজার করতে আসা ফাতেমা রশীদ বলেন, কয়েকটা সবজির দাম কিছুটা কমেছে এটা সত্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে দাম কমে গেছে। মৌসুম অনুযায়ী এখনো সবজির দাম বেশি। মুলা আর পেঁপে ছাড়া বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে রয়েছে। এমনকি কিছু কিছু সবজি ১০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম বাড়তি হওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতা মাসুম মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। সে কারণে আমাদের কেনা দাম বেশি পড়ছে, ফলে বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ১৩০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শিম (প্রকারভেদে) ৬০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, নতুন আলু ৮০-৯০ টাকা, পেঁয়াজপাতা ১০০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মানভেদে পটল ৬০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০  টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ফালি ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ থেকে ১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ব্রকলি ৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে। 

কয়েক সপ্তাহ ধরেই মুরগির মাংসের দাম কমায় সেখানে স্থিতিশীল অবস্থাই রয়েছে। গতকাল বাজারগুলোতে দেশি মুরগি ছাড়া সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম এবং সব ধরনের ডিমের দাম অপরিবর্তিত। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে। বাজারে প্রতি কেজি বয়লার মুরগির দাম কমেছে ২ থেকে ৫ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ৮ থেকে ১০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫ টাকা। তবে দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। দেখা গেছে, বয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, কক মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৭৮ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১১০ টাকা এবং সাদা ডিম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 

তবে সামনে মুরগির দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সামনে থার্টি ফাস্ট, পিকনিকের মৌসুমও আছে। তখন দাম বাড়বে। 

বাজারে দেশি রসুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, চায়না রসুন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ দরে বিক্রি হয়েছে গতকাল। 

মাছের বাজারেও স্বস্তি ফিরেনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ ১১০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০ থেকে ১ হাজার  টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বেলে মাছ ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারগুলোতে মুদিপণ্যের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। প্রতি কেজি প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

মৃত্যু প্রায় ১ হাজার ৮০০, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত

এশিয়ার ৩ দেশে ভয়াবহ বন্যা মৃত্যু প্রায় ১ হাজার ৮০০, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত

সবুজ সংকেত পেলেই ঢাকায় আসবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সবুজ সংকেত পেলেই ঢাকায় আসবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

বাজারে মিলছে না সুবাতাস, শীতেও ঘাম ছুটছে ক্রেতার

ভোগ্যপণ্য বাজারে মিলছে না সুবাতাস, শীতেও ঘাম ছুটছে ক্রেতার

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ওয়ার্ক পারমিটে কড়াকড়িতে উদ্বেগ

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ওয়ার্ক পারমিটে কড়াকড়িতে উদ্বেগ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App