মেসির সঙ্গে তুলনা না করার অনুরোধ ঋতুপর্ণার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:০০ এএম

ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি : সংগৃহীত
প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আর সেই ইতিহাস গড়ার নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা। স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষে তাঁর জোড়া গোলেই নিশ্চিত হয়েছে এই কৃতিত্ব। দেশে ফেরার পর সংবর্ধনা পেয়েই ক্লাব ফুটবলে খেলতে আবারও উড়াল দিয়েছেন ভুটানে।
ভুটানের পারো শহর থেকে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার জানিয়েছেন, তিনি মেসি নন—তিনি ঋতুপর্ণা, আর সেটাই থাকতে চান।
বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান তাঁকে "বাংলাদেশের মেসি" বললেও ঋতুপর্ণা বেশ স্পষ্ট, ‘মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। আমার অনুরোধ থাকবে, আমার সঙ্গে তাঁর তুলনা করবেন না। আমি ঋতুপর্ণা, ঋতুপর্ণাই থাকতে চাই।’
মাঠে তাঁর জোড়া গোলেই মিয়ানমারের বিপক্ষে জয় এসেছে ঠিকই, তবে কৃতিত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে নারাজ ঋতুপর্ণা। তিনি বলেন, আমি গোল করেছি ঠিক, কিন্তু গোলের বলটা আমাকে কেউ না দিলে করতাম কীভাবে? দলীয় খেলার সৌন্দর্যই এখানেই।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কাঠমান্ডুতে ঐতিহাসিক গোল হোক, কিংবা এবার মিয়ানমারে জোড়া গোল—সবকটাই নিজের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের জার্সিতে করা প্রতিটি গোল আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ- বললেন ঋতুপর্ণা।
ঋতুপর্ণার ব্যক্তিগত জীবনের সংগ্রামটাও কম নয়। অর্ধযুগ আগে ক্যান্সারে বাবাকে হারিয়েছেন, তিন বছর আগে একমাত্র ভাইকেও। মা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমার মায়ের চিকিৎসা এবং পরিবারের সব খরচ এখন আমার কাঁধে। বাফুফের দেওয়া মাসিক ৫৫ হাজার টাকার সম্মানির বাইরে তাদের তেমন আয়ের উৎসও নেই বলে জানান দেশের ফুটবলের এই তারকা।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন মিশন অস্ট্রেলিয়া
মাত্র ২১ বছর বয়সেই জাতীয় দলের সিনিয়র সদস্য। ঋতুপর্ণার নতুন স্বপ্ন এখন বিশ্বকাপ। বলেন, এশিয়া কাপে আমরা খেলছি, বিশ্বকাপে কেন নয়? কঠিন ঠিকই, কিন্তু অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ৬ বছর আগে মিয়ানমারের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হেরেছিল। সেই ম্যাচে ছিলেন ঋতুপর্ণা। আর আজ? সেই মিয়ানমারকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই ছয় বছরে আমরা অনেক পরিণত হয়েছি, বলেন তিনি।
নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুর কারিগর হিসেবে রাঙামাটির বীরসেন চাকমার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন ঋতুপর্ণা। এছাড়া দীর্ঘসময় জাতীয় দলে কোচিং করানো গোলাম রব্বানী ছোটন, পল থমাস এবং বর্তমান কোচ বাটলারসহ ফেডারেশনকেও তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
সম্মান, স্বীকৃতি, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ঋতুপর্ণার কথায় বিনয়ের ছাপ স্পষ্ট। তিনি জানান, আমি নিজেকে সাধারণ একজন ফুটবলারই মনে করি।আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথাও খোলামেলা বললেন ঋতুপর্ণা। বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু চাওয়া নেই। যদি মনে করে আমরা প্রাপ্য, তাহলে দিক। না দিলে নেই। ২০২২ সালে তাঁর জন্য বরাদ্দ জমি এখনো শুধু ‘আশ্বাসেই’ রয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের ছাত্রী ঋতুপর্ণা জানান, খেলার ব্যস্ততায় নিয়মিত ক্লাস করা না গেলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়াবিদ হতে হলে পড়াশোনাও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।