মধ্যরাতে কুকুরের চিৎকার বাঁচিয়ে দিলো ৬৭ জনকে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাত তখন ১টা। বাড়ির দোতলায় কুকুরটা খুব চিৎকার করছিল। কুকুরের ডাকে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল নরেন্দ্রর। বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি চলছে। কুকুরের ডাক ক্রমেই কেমন যেন সন্দেহজনক হয়ে উঠছিল। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় কুকুরটিকে চুপ করাতে তিনতলা থেকে নীচে নেমে এসেছিলেন নরেন্দ্র। হঠাৎ তিনি ঘড়ঘড় করে কিছু এগিয়ে আসার শব্দ পান। তার পরই বাড়ির দেওয়ালে চোখ পড়তেই আঁতকে ওঠেন।
দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। আর সেই ফাটল ক্রমে চওড়া হচ্ছে। বাড়ির সকলকে জাগিয়ে তুলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিসের শব্দ ওটা? নরেন্দ্রর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে বিষয়টি বুঝে ওঠার জন্য।তার পরই বুঝতে পারেন ভয়ানক বিপদ এগিয়ে আসছে। চিৎকার করে গ্রামের অন্য বাসিন্দাদের জাগিয়ে তোলেন।
নরেন্দ্র জানান, কুকুরটিও তার পিছু পিছু যাচ্ছিল। আর সমানে ডেকে চলেছিল। গ্রামে মোট ২০টি পরিবার। নরেন্দ্রর চিৎকার শুনে এক এক করে সকলেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। পাহাড় থেকে কিছু নেমে আসছে। দ্রুত অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। তার পরই সবাই মিলে একটি উঁচু মন্দিরে আশ্রয় নেন।
তারা আশ্রয় নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশাল জলরাশি আর পাথর নিয়ে পাহাড় থেকে আকস্মিক ঢল নেমে এসে। একের পর এক বাড়ি চোখের সামনে গুঁড়িয়ে যেতে শুরু করল। ভেসে গেল বেশ কয়েকটি বাড়ি।
নিজেদের হাতে তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই বাড়ি ঢলের পানিতে মিশে যেতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না বাসিন্দারা। এমনই জানিয়েছেন নরেন্দ্র।
অনেকে সেই দৃশ্য দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটি, দু’টি বাড়ির ভগ্নাবশেষ ছাড়া গোটা গ্রামটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
নরেন্দ্র জানান, ওখানে যে তাদের একটি গ্রাম ছিল, কয়েকটি পরিবারের বাস ছিল, তা বুঝে ওঠা দায়। পাহাড়ি ঢল গিলে খেয়েছে গোটা গ্রামটিকে। গত ৩০ জুন ঘটনাটি ঘটেছে হিমাচলের মন্ডীর ধরমপুর এলাকার সিয়াথি গ্রামে।
তিনি জানিয়েছেন, কুকুরটি যদি না চিৎকার করত, তা হলে ২০টি পরিবারের ৬৭ জনেরই মৃত্যু হতো। কিন্তু কুকুরের চিৎকারই তাদের প্রাণ বাঁচাল। নরেন্দ্রদের ঠিকানা এখন একটি মন্দির। সেখানেই গত এক সপ্তাহ ধরে রয়েছেন।
হিমাচলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মন্ডী জেলা। সবচেয়ে বেশি মেঘভাঙা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল হয়েছে এই জেলাতেই। গত ২০ জুন থেকে এখন পর্যন্ত হিমাচলে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ অনেকে।