নিউইয়র্কে ‘হোপ নেভার ডাইস’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৪:০৯ এএম

নিউইয়র্কে ‘হোপ নেভার ডাইস’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত হলো কোভিড-১৯ মহামারিকে কেন্দ্র করে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “Hope Never Dies” (হোপ নেভার ডাইস)-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী। শুক্রবার, ২০ জুন সন্ধ্যায় আয়োজিত এই আয়োজনটি যেন পরিণত হয় জীবন জয় এবং মানবতার বিজয়গাঁথা উদযাপনের এক অনন্য উৎসবে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মানুষের জীবনযাত্রায় যেভাবে বিপর্যয় ডেকে আনে, সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা এবং তার বিপরীতে মানুষের অসীম ধৈর্য, সাহস, সংগ্রাম ও আশাবাদের কাহিনি উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে। লেখক, সাংবাদিক ও নির্মাতা শামীম আল আমিনের গবেষণা, পরিকল্পনা, ও পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটি। ৪২ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রটি নিউইয়র্ককেন্দ্রিক কোভিড-১৯ সময়কালীন মানুষের অভিজ্ঞতা ও লড়াই তুলে ধরেছে এক অনন্য উপস্থাপনায়।
প্রদর্শনী শুরু হয় নতুন প্রজন্মের শিল্পী আলভান চৌধুরীর কণ্ঠে অনুপ্রেরণামূলক গান “We Shall Overcome” দিয়ে। এরপর নির্মাতা শামীম আল আমিন তাঁর বক্তব্যে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পেছনের প্রেরণা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কানাডা থেকে আগত কিংবদন্তি সংবাদ পাঠিকা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আসমা আহমাদ মাসুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এই প্রামাণ্যচিত্রের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, নিউইয়র্কের স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান মেটা ইনফো টেক (এমআইটি)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মাহবুব সিদ্দিকী।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এর পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পুরো মিলনায়তন সুধীজন ও আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে। সবাই এক নিঃশ্বাসে দেখেন প্রামাণ্যচিত্রটি, যেখানে তাঁদের অনেকেরই ব্যক্তিগত স্মৃতি, অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতা যেন নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
প্রদর্শনী শেষে বিশিষ্টজনেরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সব্যসাচী শিল্পী তাজুল ইমাম, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, বাংলাদেশ অস্কার কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট নাট্য অনুবাদক প্রফেসর আব্দুস সেলিম, খ্যাতিমান নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা, বিশিষ্ট থিয়েটার গবেষক ও বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ড. বাবুল বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা।
এছাড়া সংস্কৃতিজন গোপন সাহার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আশা গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও আকাশ রহমান, নাট্যজন মিল্টন আহমেদ, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট মিয়া জাকির, নাসির আলী খান পল, রুবাইয়া রহমান, গ্রি ম্যাকানিক্যাল ইয়নকার্সের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও তোফায়েল চৌধুরী লিটনসহ অনেকে। ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে…” গানটি দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি। একরাশ মুগ্ধতা, বিষণ্ণ স্মৃতি আর বেঁচে থাকার প্রেরণা নিয়ে মানুষ ফিরে যায় যার যার ঘরে।
প্রামাণ্যচিত্রে যাদের অভিজ্ঞতা ও সাক্ষাৎকার রয়েছে তারা হলেন, সাবেক কলেজ প্রিন্সিপাল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রানা আহমেদ, শিক্ষক, গায়িকা ও থিয়েটারকর্মী মিলাদুন অ্যানি, ইউনিসেফের টিকাদান বিষয়ক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. আনিসুর রহমান সিদ্দিকী, ক্রিডমোর সাইকিয়াট্রিক সেন্টারের চিফ সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মুনিবুর আর খান, অ্যালমহার্স্ট হাসপাতালের এটেনডিং ফিজিশিয়ান ডা. মিতা চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ মালেক, মেটা ইনফো টেক (এমআইটি) ফাউন্ডার ও সিইও মাহবুব সিদ্দিকী, নিউইয়র্কের স্কুলের শিক্ষক সহকারী, আবৃত্তিশিল্পী ও থিয়েটারকর্মী শুক্লা রায়, ইউএস পোস্টাল সার্ভিস কর্মরত ও আবৃত্তিশিল্পী গোপন সাহা, অটিজম সোসাইটি হ্যাবিলিটেশন অর্গানাইজেশন (আসো) এর নির্বাহী পরিচালক রুবাইয়া রহমান, সংগীতশিল্পী মেলাল শাহ, নিউইয়র্ক সিটির প্যারামেডিক মোতাসিম “বিল” হোসেন, সাবেক স্কুল শিক্ষক নাসিম বানু চাঁপা, ইয়েলো ক্যাব চালক আব্বাস আলী এবং হাইস্কুল শিক্ষার্থী গুঞ্জরি সাহা।
উদ্বোধনী ও সমাপনী আবৃত্তি করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। ধারাবর্ণনায় ছিলেন শামস উজ জোহা। টাইপোগ্রাফি ও পোস্টার ডিজাইনে ছিলেন মামুন হোসাইন। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেছেন স্বপ্নীল সজীব এবং সংগীতায়োজনে ছিলেন অভিজিৎ চক্রবর্তী জিতু। এই প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্যধারণ করেছেন শফিকুল ইসলাম সাবু, শামীম আল আমিন ও শেখ তানভীর আহমেদ। গ্রাফিক্স, সম্পাদনা ও সংগীতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। সিনে হাউজ মিডিয়া ছিল কারিগরি সহায়তায়।